সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন, বাদ পড়লো যা

| শুক্রবার , ৪ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

কর্মচারীদের আপত্তির মুখে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়। সেখানে বলা হয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।

জানা যায়, নতুন অধ্যাদেশে আগের চেয়ে কিছু বিষয় নমনীয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আগের সংশোধনীতে অনেকটা নোটিশ দিয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া অপরাধের ধরনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এর আগে গত ২৫ মে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। তাতে চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন। এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে। তাতে অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা ছিল। আর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাকে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা ছিল। তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে।

এরপর অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের ভেতরে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। এরপর এই অধ্যাদেশ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। এখন অধ্যাদেশটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এখন ‘অনানুগত্যের শামিল’ সংক্রান্ত ধারাটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশোধনে অনানুগত্যের শামিল সংক্রান্ত ধারাটির জায়গায় বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র ও নির্দেশ অমান্য করেন বা উহার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এসব কাজে অন্য সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেনএসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া অভিযোগের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয় অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা অভিযুক্ত কর্মচারীর জ্যেষ্ঠ (কর্মে) হতে হবে এবং অভিযুক্ত কর্মচারী নারী হলে তদন্ত কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ ছাড়া তদন্তের আদেশ পাওয়ার পরবর্তী ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে তদন্তকাজ শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এ রকম কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।

এদিকে আপত্তি আমলে নিয়ে সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তাকর্মচারী ঐক্য ফোরামের কোমহাসচিব মো. নজরুল ইসলামের সই করা এক বিবৃতিতে এ সন্তুষ্টির কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনযন্ত্রে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ বহাল ও বিদ্যমান থাকায় অহেতুক এ ধরনের অধ্যাদেশ জারির প্রয়োজন ছিল না। যা হোক, কালো অধ্যাদেশটি সংশোধনের জন্য সরকারের বোধোদয় হয়েছে এ জন্য সারা দেশের ১৮ লক্ষ কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনটি ছিল মূলত সামরিক শাসনামলের বিতর্কিত ও কালো কানুন বাতিল করার জন্য। বর্তমান সরকার কর্মচারীদের আপত্তি ও আশঙ্কাগুলোকে বিবেচনায় এনে সংশোধন করেছে। এটি মন্দের ভালো দিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ-জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধএনবিআরের আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের তথ্যানুসন্ধান শুরু