সরকারি খুঁটিতে বেসরকারি বাণিজ্য

ডিস ইন্টারনেটের তারে বিদ্যুৎ লাইনে ঘটছে অগ্নিকাণ্ড, ক্ষতি অনেক ।। বিটিআরসির গাইডলাইন ১৫ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি

হাসান আকবর | রবিবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

নগরজুড়ে অপরিকল্পিত ডিস ও ইন্টারনেটের তার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিন নগরীর কোথাও না কোথাও তারের জঞ্জাল বৈদ্যুতিক লাইনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আগুনে পুড়ে যাচ্ছে পিডিবির লাখ লাখ টাকার তারসহ নানা যন্ত্রাংশ। বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের পাশাপাশি শিল্পকারখানায়ও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে জনভোগান্তি ছাড়াও কোটি কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতি হচ্ছে। পিডিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে জানানো হলেও ডিস, ইন্টারনেট ক্যাবলের জঞ্জাল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। নগরের প্রায় পুরো এলাকায় তারের জঞ্জাল রয়েছে। হাজার হাজার বিদ্যুৎ পোল ব্যবহার করে ডিস ও ইন্টারনেটের তার নেওয়া হয়েছে। সরকারি খুঁটিতে বেসরকারি এই বাণিজ্য নগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিন নগরীর কোথাও না কোথাও ডিস ও ইন্টারনেটের তারের অগ্নিকাণ্ডের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হচ্ছে। পিডিবির মূল্যবান তার ও ট্রান্সফরমারসহ নানা যন্ত্রপাতি পুড়ে যাচ্ছে। একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে যতটুকু না বিদ্যুতের তার থাকে তার থেকে অনেক বেশি থাকে ডিস ও ইন্টারনেটের তার।

জানা যায়, নগরীর প্রায় প্রতিটি বৈদ্যুতিক খুঁটির গায়ে টিনের তৈরি বাক্সের ভিতরে ডিস বা ইন্টারনেটের সিগন্যাল এমপ্লিফায়ার থাকে। এসব এমপ্লিফায়ারে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয় খুঁটির উপর দিয়ে যাওয়া মেইন লাইন থেকে। এই সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে পিডিবির অনুমতি নেওয়া হয় না এবং বিদ্যুতের বিলও দেওয়া হয় না। সারা দেশে এভাবে এমপ্লিফায়ারে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সিস্টেম লস হিসেবে চুরি হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ চুরি থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে সিগন্যাল এমপ্লিফায়ারে অগ্নিকাণ্ড। এখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বিদ্যুৎ লাইনে। সবকিছু পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়।

পিডিবি সূত্র জানায়, ডিস ও ইন্টারনেটের তারে সামান্য স্পার্ক থেকে শুরু হয় অগ্নিকাণ্ড এবং তার দ্রুত পুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে কেবল ডিস ইন্টারনেটের তারই পুড়ে না, বিদ্যুতের তারসহ সবকিছু পুড়ে যায়।

গত রাতে ওয়াসা মোড় সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পের পাশে একটি খুঁটিতে আগুন ধরে যায়। এতে ডিস, ইন্টারনেটের তারের পাশাপাশি পিডিবির গুরুত্বপূর্ণ আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের উপরের অংশ পুড়ে যায়। ফলে স্টেডিয়াম সাবস্টেশনের আওতাধীন বিস্তৃত এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল লাইন মেরামত করা হলেও পিডিবিকে বড় আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হয়েছে।

ডিস, ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলো ছাড়া নাগরিক জীবন কল্পনা করা যায় না মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ৪০/৫০ জন অপারেটর একই খুঁটি ব্যবহার করে পৃথক পৃথক লাইন টেনে নিয়ে গেছে। যদি সবগুলো লাইন একটি ক্যাবলের মাধ্যমে করে তারা প্রফিট শেয়ার করতেন তাহলে তারের জঞ্জাল থেকে পিডিবি নিস্তার পেত। এতে কেবল নগরীর সৌন্দর্য নয়, নানা অঘটন থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। এছাড়া ওয়্যারলেস সিস্টেমের মাধ্যমে এই অনাহূত অত্যাচার থেকে নিস্তার মিলে। ডিস, ইন্টারনেটের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইন গড়ে তোলার মাধ্যমেও এই সংকটের সুরাহা হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে কয়েকশ ডিস এবং ইন্টারনেট ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা লাইন রয়েছে। প্রতিটি ক্যাবল লাইনের ভরসাস্থল বৈদ্যুতিক খুঁটি। একটি তারের সাথে অপর তার এমনভাবে পেঁচিয়ে রাখা হয়, শুধু সৌন্দর্যহানি নয়, এটা দুর্ঘটনারও বড় কারণ। নগরীর পিডিবির প্রতিটি পোলেই রয়েছে তারের জঞ্জাল।

সূত্র বলেছে, ডিস, ইন্টারনেটের ক্যাবল নিয়ে পিডিবির পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশনকে বারবার পত্র দেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বিটিআরসি ২০০৮ সালে সারা দেশের সব ইন্টারনেটের ক্যাবল ভূগর্ভস্থ একটি কমন নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশনস ট্রান্সমিশন নেটওয়াক বা এনটিটিএন নামে একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করে। কিন্তু ওই গাইডলাইনের আলোকে গত ১৫ বছরেও কোনো কিছু হয়নি। ইতোমধ্যে সব ঝুলন্ত তার আন্ডারগ্রাউন্ড করার জন্য দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়া হলেও কাজ হয়নি।

পিডিবির পদস্থ একজন কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, ডিস ও ইন্টারনেটের ক্যাবলের কারণে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট প্রাত্যহিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে অসংখ্য ট্রান্সফরমার বিকলের পাশাপাশি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাও আছে। বর্ষাকালে ক্যাবলসহ সর্বত্র পানি থাকায় বিপদের আশঙ্কা অনেক বেশি। তিনি বলেন, ক্যাবলের জঞ্জাল নিয়ে না ভাবলে সামনে আমাদেরকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, শিশুসহ আহত ৩
পরবর্তী নিবন্ধহালিশহরে খালে শিশুর ভাসমান লাশ