সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার বিধান সম্পর্কে

জিয়া হাবীব আহসান | মঙ্গলবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

একটি মামলার সংবাদ পর্যালোচনা করলাম মানবাধিকারের দৃষ্টিতে। কেননা নারী অপহরণ মামলায় ৩ পুলিশের বিরুদ্ধে আনিত নালিশ গ্রহণ করলো না ঢাকার একটি আদালত।
এক নারীকে অপহরণের অভিযোগে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করা হলেও আদালত চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি অনুমোদন না থাকায় ওসিসহ পুলিশের তিন কর্মকর্তার নাম মামলার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার ১০সেপ্টেম্বর ২০২০ ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এই আদেশ দিয়েছেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন ওই ট্রাইব্যুনালের স্টেনোগ্রাফার আনোয়ার হোসেন। ‘অপহরণের অভিযোগে এক নারী ট্রাইব্যুনালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসিসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করেন। আদালত চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের তথা সরকারি অনুমোদন না থাকায় মামলায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা আসামি করা হয়নি।’ বাদীর আাইনজীবী জাকির হাওলাদার বলেন, অপহরণের অভিযোগে তাঁর মক্কেল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। আদালত বুধবার ওই নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আরএ বিষয়টি নিয়ে Academic discussion এর অবতারণা করলাম বিজ্ঞ আইনযোদ্ধাদের সাথে। সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে সিআরপিসির ১৯৭ ধারার অর্থ কি তবে নতুন করে ধরা দিচ্ছে আইনের জগতে? নাকি কেবিনেট ডিভিশনের পত্রের সাথে মিলানো কোন অর্থ? বুঝে উঠতে পারছি না কিছু। আপনারা কেউ কি বুঝিয়ে বলবেন? বাদীর কি উচিৎ নয় এ ধরনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করা মহামান্য উচ্চ আদালাতে? ঐ রিভিশনে কেবিনেট ডিভিশনের সেই বিতর্কিত পত্রের প্রাসঙ্গিকতা আলোচনায় এনে ১৯৭ ধারা বিষয়ে ইতোমধ্যে আপীল বিভাগের নীতি পুনরায় নির্দেশনা আকারে আসতে পারে। এতে নিম্ন আদালতের বিজ্ঞজন ও আমাদের একটু ১৯৭ ধারা বুঝতে সুবিধা হবে একটু সাহস সঞ্চার হবে মনে করি।জয় হোক মানবতার, মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয়। সিআরপিসি ১৯৭ ধারা সরকারি কর্মচারী বলতে পুলিশের বিসিএস ক্যাডার এসপি পদবী ধারী। সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে- Officers of BP upto inspector can not invoke the privilege under section 197 of CrPC —- ASI, Ayub Ali Sarder and others vs the state 58 DLR (AD),13. নালিশ বা ফৌজদারী অভিযোগে যদিএস আই এবং কনস্ট্রেবল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যে বিরুদ্ধে অভিযোগ আনয়ন করা হয়, এতদসংক্রান্তে The Code Of Criminal Procedure, 1898 এর 197(1) ধারা আমি পর্যালোচনা করা যায়। উক্ত ধারানুযায়ী সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধানিষেধ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে । উক্ত ধারা বা পূর্বানুমতি অপরাধের cognizance বা আমলে গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন’, তদন্তের আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়ে ASI MD Ayub Ali Sardar Vs State, 58 DLR (AD) (2006) 13 (Amirul Kabir Chowdhury) মামলার সিদ্ধান্ত প্রণিধানযোগ্য। উক্ত মামলার রায় অনুযায়ী যে কর্মকর্তা- কর্মচারীরা চাকরি হতে অপসারণের জন্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন হয় সে কর্মচারী বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে (Cognizance) গ্রহণের পূর্বে সরকারের (নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের) অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর Inspector পদমর্যাদার কর্মকর্তা IGP কর্তৃক, SI, ASI, Sergeants, Head Constable পদমর্যাদার কর্মকর্তা DIG কর্তৃক এবং নায়েক কনস্ট্রেবল পদমর্যাদার ব্যক্তির পুলিশ সুপার কর্তৃক চাকরি হতে অপসারণযোগ্য । পুলিশ বাহিনী ASP থেকে তদুর্দ্ধ পদমর্যাদার কর্মকর্তা মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গ্রহণের পূর্বে সরকারের অনুমতি দিতে হবে কিন্তু, Inspector থেকে তদঃনিম্ন কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের ক্ষেত্রে অনুমতি গ্রহণের আবশ্যকতা নেই। অর্থাৎ তারা ১৯৭ (১) ধারার Protection পাবেন না । এ বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে – The two petitioners being Assistant Sub-Inspector of police and constable respectively cannot claim but they are Public servants not removable from their office expect with the previous sanction of the Government. So section 197 of the Code has got no application…..’ একই বিষয়ে State Vs Salauddin 60 DLR ১৮৮ মামলায় বলা হয়েছে – ‘An Officer-in-Charge of a police station does not fall in this category as Government sanction is not required for this removal from service. Secondly, in the facts and circumstances of the instant case. the provisions of section 197 would not be attracted in any event since the act alleged to have been done constitution an offence was certainly not done while acting or purporting to act in the discharge of his official duty …’ একই বিষয়ে Shafiqur Rahman Vs State 37 DLR 167 মামলায় বলা হয়েছে – ‘Unless a person is a public servant not removable except with the government sanction, bar against his prosecution cannot be invoked.’ এছাড়াও Trial of civil suits and criminal cases, Justice Mohammad Hamidul Haque (সংস্করণ ২০১৫), পৃষ্ঠা ২৯২-এ বলা হয়েছে- ‘ …. But if the Public servant as one who is removable from his office without any sanction of the Government, this provision shall not apply i.e for filing a criminal case against such a public servant, no previous sanction of the government will be necessary. এছাড়াও, The Code of Criminal Procedure, Vo 2, Shamkal Mohammaed, nadeem Shankal (সংস্করণ ২০০৩), এর ১০৮৫ পৃষ্ঠার বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স প্রদান করে চকিদার, দফাদার, ফরেস্ট রেঞ্জার, পুলিশের সাব ইন্সপেক্টার, A.S.I এবং কনস্টেবলরা ১৯৭ (১) ধারার Protection পাবেন না মর্মে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং উপরোক্ত সিদ্ধান্ত নজির সমূহ অনুযায়ী ইন্সপেক্টর থেকে নিম্ন পদধারণকারী ব্যক্তিগণের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হতে বা আমলে গ্রহণ করতে সরকারের পূর্বানুমতি প্রয়োজন নেই মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় তদন্তের আদেশ প্রদান করা যুক্তিযুক্ত।
লেখক : আইনজীবী, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসন কর্মী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজ্ঞানতাপস-শিক্ষাবিদ আবদুর রহমান
পরবর্তী নিবন্ধভূগোলের গোল