ভাবছেন একটু শক্ত হই টাকা পয়সা কিছু কামিয়ে নিই পরে সংসারী হবো। দেখা গেলো টাকা আছে আপনার কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না মনের মতো পার্টনার। টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে চুলে টাক পড়ে গেলো, চেহারায় বয়সের ছাপ পড়লো দিন শেষে স্বপ্নের সাথী পাওয়া গেলোনা। বাবা-মায়ের পীড়াপীড়িতে উনাদের পছন্দের একজনকে বিয়ে করতে হলো কিন্তু মতের মিল হলোনা, সংসারে শান্তি এলো না।
আবার যখন দেখলেন শেয়ার বাজারে টাকা ইনভেষ্ট করে আত্নীয় পরিচিতজনরা দেদারসে কামাই করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে, আপনি তা দেখে বাপ মাকে প্রলুব্ধ করে বাপের সারাজিবনের সঞ্চয় শেয়ার বাজারে খাটালেন, বাবা মাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন অমুক তমুকের মতো টাকার মধ্যে শুইয়ে রাখবেন।
দেখা গেলো আপনি যখন শেয়ার বাজারে আসলেন তখন শেয়ারে ধস, আপনি সব হারিয়ে নিঃস্ব।
কারো পরিবারে হয়তো স্বামী-স্ত্রী দুজন ভালো চাকুুরী করছেন, হজ্বে যাওয়া আপনাদের জন্য ফরজ হয়েছে। ভাবলেন না এতো তাড়া কিসে? বাচ্চারা একটু বড় হোক, বাবা মাসহ একসাথে হজ্বে যাবো। বাচ্চারা বড় হলো, বাবা মায়ের বয়সও বাড়লো সেই সাথে আপনারও। হজ্বের রেজিস্ট্রেশন করলেন দুষ্ট করোনার জন্য দুবছর পর এবার হজ্বে যেতে পারছেন। কিন্তু সৌদী সরকার থেকে নির্দেশনা আসলো ৬৫ বছরের উপরে যারা তারা হজ্বে যেতে পারবে না। আপনার বাবা মা যেতে পারছেন না। তাছাড়া সৌদী মুয়াল্লিম ফি প্রায় তিনগুনের ও বেশী বৃদ্ধি করা হয়েছে, সৌদী আরবের সকল সার্ভিসের উপর ১৫% ভ্যাট যুক্ত করা হয়েছে, বিমান ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনা পরবর্তী এ হজ্ব স্মরণকালের ব্যয় বহুল হজ্ব। করোনায় সব লণ্ডভণ্ড করে দিলো, ব্যাংকে আপনার চাকুুরী চলে গেলো, আয়ের পথ সংকুচিত হলো। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলেন বুড়ো বাবামাকে বাচ্চাদের কাছে রেখে যাবেন না তাই স্ত্রীকে রেখে গেলেন, আপনি একাই হজ্বে যাচ্ছেন।
আমাদের প্রতি কদমে মৃত্যুও হেঁটে চলে। জীবন চরম অনিশ্চিত। এই আছি এই নেই। যেমন ধরুন সামপ্রতিক সময়ের সীতাকুণ্ড বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। কতজনের স্বপ্ন মুহূর্তে আগুনের লেলিহান শিখায় ঝলসে গেলো। আহত বা নিহতরা কেউ জানতোনা তাদের ও পরিবারের ভাগ্যে এমন বিপর্যয় নেমে আসবে।
আমরা অনেকেই ভাবি একটু বয়স বাড়লে নামাজ পড়বো আর ছাড়বো না। কিন্তু আল্লাহপাক কখনযে কার জন্য যমদূত আজরাইলকে পাঠায় কেউ তা জানিনা। আমরা নানা রকম পরিকল্পনা করি, স্বপ্ন দেখি কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী একমাত্র মহান আল্লাহপাক। আজ বেঁচে আছি আগামীকাল বেঁচে থাকবো কিনা বা একই তালে জিবন চলবে কিনা তা আমরা কেউ বলতে পারিনা। তাই ভবিষ্যতের চিন্তা বাদ দিয়ে ইহকাল ও পরকালের শান্তির জন্য রুটিন মাফিক যথাসময়ে সকল কাজ করে ফেলা উচিত। লালন শাহের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই– “তুমি দিন থাকিতে দিনের সাধন কেন জানলেনা / সময় গেলে সাধন হবেনা,সময় গেলে সাধন হবেনা।” লেখক : উপাধ্যক্ষ, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রাম।