বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৪০০ একর জমির ওপর একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিজেড) গড়ে তোলা হবে। তিনি একে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘গেম চেঞ্জার’ (আমূল পরিবর্তন আনা) হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া লালদিয়ার চরে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনালে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে বলেও জানান চৌধুরী আশিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বার্ষিক এফডিআই ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি নয়। একটি প্রকল্প থেকেই যদি ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসে, তবে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বিডার পক্ষ থেকে আমরা এই প্রকল্পের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চর ও বে টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। বিডা চেয়ারম্যান জানান, দেশে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য স্থান হিসেবে আনোয়ারা পরিদর্শন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল ২০৩০ সালে চালুর আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, সেখানে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। বে টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি টার্মিনালে বিদেশি দুটি কোম্পানি মোট ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ (এফডিআই) করবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ফান্ডিংয়ে কিছু কাজ করছি। সরকার থেকে কিছু ফাইন্যান্সিং হচ্ছে। যেটা ব্রেক ওয়াটার হবে, সেটা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ফান্ডিং এ হবে। আর সেই সাথে এডিবি আমাদের সাথে কাজ করছে। অ্যাডভাইজার হিসাবে তাদের সাথে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, এখানে যেই দুইটি পোর্ট অপারেটরের কথা বলা হচ্ছে, পিএসএ সিঙ্গাপুর, পিএসএ’র খুবই ভালো এক্সপেরিয়েন্স। তারা ওই এক্সপেরিয়েন্সটা নিয়ে আসবে, আমাদের সাথে বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো নিয়ে আসবে এবং আমরা এস্টিমেট করছি যে, এই পিএসএ এবং ডিপি ওয়ার্ল্ড রাফলি এক বিলিয়ন ডলার করে এই প্রজেক্টে ইনভেস্ট করবে।
এক বিলিয়ন, এক বিলিয়ন করলে প্রথম দুইটা টার্মিনালেই আমরা প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের মতো একটা ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের চেহারা দেখতে পাব। অভিয়াসলি এটা কিন্তু ওভার টাইম হবে। তাই আমরা যদি মনে করি যে, ২০২৬ সালে হঠাৎ করে ১০ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট, এভাবে হয় না জিনিসটা। একটু গ্রাজুয়ালি আসবে।
বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ওনাদের কনস্ট্রাকশন পিরিয়ডের মধ্যে ওনারা গ্রাজুয়ালি ইনভেস্ট করতে থাকবে এবং আমরা আশা করছি যে, ২০৩০ এর মধ্যে, ৩০ এর দিকে আমরা এই পোর্টগুলোকে চালু করতে পারব।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। সেটা অনুধাবন করতে পেরেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, আমরা বাংলাদেশকে একটা ম্যানুফেকচারিং হাবের মধ্যে গড়ে তুলতে চাই। ফ্যাক্টরি বানাতে চাই। আমাদের একটা ইয়াং পপুলেশন আছে। তাদেরকে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিনিয়োগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। এটার জন্য আমাদের কমার্শিয়াল হাবকে উন্নত করতে হবে। নগরীর সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ঢাকা নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু আপনি যদি দেখেন, দেখতে পাবেন যে, চট্টগ্রাম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পর্তুগিজরা যখন এসেছে, ব্রিটিশরা যখন এসেছে, সবসময় চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশকে সফল করতে হলে চট্টগ্রামকে সফল করতে হবে। চট্টগ্রাম আমাদের টোটাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রডাকশনের একটা মেজরিটি অংশ কাভার দেয়। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে টোটাল ইন্ডাস্ট্রির ৩০–৪০ শতাংশ এখনই হয়। আমরা যে বড় বড় ইনিশিয়েটিভের কথা বলি, চায়না স্পেশাল ইকোনমিক জোন, মীরসরাই ইকোনমিক জোন, ফ্রি ট্রেড জোনের কথা বলছি সব চট্টগ্রামে। ম্যানুফকচারিং পাওয়ার হাউসগুলো চট্টগ্রামে হবে। এর প্রধান কারণ চট্টগ্রামের বন্দরগুলো। বন্দরগুলোকে সাকসেসফুল করতে না পারলে সব মাস্টারপ্ল্যান ফেল হবে।
আশিক চৌধুরী বলেন, এই বাংলাদেশের ফুল অ্যাম্বিশনটার মধ্যমণি হচ্ছে চট্টগ্রাম। আমরা বাংলাদেশকে যেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা, ইকনোমিক্যালি চিন্তা করছি। সেটার সবচেয়ে সেন্টার পিস হচ্ছে গিয়ে চট্টগ্রাম। এবং চট্টগ্রামের এই সেন্টার পিসটার একটা অংশ আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি।
আমরাও চাই চট্টগ্রাম যথাযথ গুরুত্ব পাক। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। চট্টগ্রামকে অবহেলিত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়।