নগরের আগ্রাবাদ চেম্বার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ–এর ‘পরিবারতন্ত্র, স্বৈরশাসন ও ভোটবিহীন নির্বাচিত’ বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এতে চট্টগ্রামের ৩৬ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যোগ দেন। চট্টগ্রাম বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এতে শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারে পরিবারতন্ত্র ভেঙে নতুন নেতৃত্ব আনার দাবি জানান ব্যবসায়ী নেতারা। এ সময় তাঁরা চেম্বারে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি জানান। তাদের দাবি, চট্টগ্রাম চেম্বারে গত পাঁচটি নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়নি।
সংগঠনের আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার কোনো পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নয়। কিন্তু বিগত কমিটিগুলো এটিকে পারিবারিক সংগঠন বানিয়ে ফেলেছে। ব্যবসায়ী সংগঠনে ব্যবসায়ীদের সুযোগ না দিয়ে ছেলে মেয়ে জামাতাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আসল ব্যবসায়ীরা সুযোগ পাননি। ঐতিহ্যবাহী চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সকে ১৭ বছর ধরে স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ করে রাখা হয়েছে। স্বৈরশাসন ও পরিবারতন্ত্র দিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আমরা চাই, ব্যবসাবান্ধব চিটাগাং চেম্বারের ভূমিকা নিশ্চিত করতে নতুন কমিটি গঠন করা হোক।
চেম্বারকে সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ে চট্টগ্রাম চেম্বার দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেনি। তাই ভোটবিহীন নির্বাচিত বর্তমান চেম্বার পরিচালনা পর্ষদকে পদত্যাগ করতে হবে। চেম্বারকে সংস্কার করতে হবে।
পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ে চিটাগাং চেম্বার ব্যবসায়ীদের কথা বলতে পারেনি। তাদের বলয়ের বাইরের কারোর চেম্বারের পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই এবার সম্মান থাকতে পদত্যাগ করুন। তা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
বিজিএপিএমইএ পরিচালক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাবেক দুই সভাপতি এম এ লতিফ ও মাহবুবুল আলম ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারকে স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এর ফলে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই সাবেক দুই সভাপতির কবল থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারকে মুক্ত করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বশীল চেম্বারে পরিণত করতে হবে।
সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য জামাল উদ্দিন বাবলু বলেন, পরিবারতন্ত্রের কারণে চেম্বারের অনেক কর্মচারীর চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিএনপি জামায়াত ট্যাগ দিয়ে অনেককে বিনা কারণে চেম্বার থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অবিলম্বে তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।
ফাল্গুনী ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল খান বলেন, যারা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আছেন তারাই চেম্বারের সদস্য হবেন এবং নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন। মেম্বারশিপ সহজীকরণ করতে হবে। নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি ঘুরে ফিরে চট্টগ্রাম চেম্বারে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করে আসছেন। তিনি ওমর হাজ্জাজসহ পরিচালনা পর্ষদ নেতাদের অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
বন্দর ট্রাক কাভার ভ্যান মালিক এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল বলেন, আজ এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আমরা নির্যাতিত অবহেলিত ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়েছি। পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ায় চট্টগ্রাম চেম্বার সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়ে কথা বলতে পারেনি। ব্যবসায়ীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত দীর্ঘদিন ধরে। ব্যবসায়ীরা যদি ঠিকভাবে ব্যবসা করতে না পারে, তাহলে তাদের পক্ষে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, চেম্বারের বর্তমান সদস্য তালিকা যাচাই করে সেখান থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পকেট ভোট ব্যাংক বিলুপ্ত করে একটি সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, মো. শাহনওয়াজ, আবছার হোসেন, সদস্য সাইফুল ইসলাম, এস এম হক, জামাল উদ্দিন বাবলু, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, শওকত আলী, মশিয়ুল আলম স্বপন, ইসমাইল খান, জাহাঙ্গীর আলম, হুমায়ুন কবির সোহেল, ছালামত আলী, মো. জুয়েল, আজিজুল হক, জসিম উদ্দিন ফিরোজ, জাহাঙ্গীর আলম, বেলাল হোসেন, মো. শাহজাহান, শামসুল আলম, মান্নান পাটোয়ারী, আব্দুল ওয়াজেদ সোহেল, দোস্ত মোহাম্মদ, কামাল উদ্দিন, নাসির উদ্দিন মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী নেতা বাদশা মিয়া, ফাতেমা বাদশা, ইউনুস চৌধুরী হাকিম, হাজী আবু ফয়েজ, এস এম ফরিদুল আলম, মনিরুজ্জামান টিটু, নুরুদ্দিন সোহেল, একে ফজলুল হক চৌধুরী, তাজুল ইসলাম, মোরশেদুল আলম চৌধুরী, মহিউদ্দিন, ইমরুল হাসান চৌধুরী, আরিফ হোসেন, মুস্তাক আহমেদ, আব্দুল মান্নান, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল হাসনাত, মনিরুল ইসলাম, মেজবাহউদ্দিন মানিক।