সম্ভাবনার সীমারেখা থাকে না, তাই স্বপ্ন দেখুন

ইউএসটিসির নতুন শিক্ষার্থীদের সেন্ট্রাল ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে বক্তারা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৬ জুলাই, ২০২৪ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি) এর জুলাই২০২৪ সেশনে ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের সেন্ট্রাল ওরিয়েন্টশন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, শুধু শিক্ষিত নয়, একই সাথে মানুষ হতে হবে। মানুষ হওয়ার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করতে হয়। হেসে খেলে জীবন কাটিয়ে সফল মানুষ হওয়া যায় না। সফল মানুষ হতে হলে কষ্ট করতে হয়।

বক্তারা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামকে উদ্ধৃত করে বলেন, ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা নয়, নিজের জীবনকে একটি লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেগে স্বপ্ন দেখতে হবে। একটি স্বপ্নই মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।

গতকাল সোমবার সকালে নগরীর খুলশী কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম। ইউএসটিসির ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, ফ্যাকাল্টি অব লাইফ সায়েন্সেস, ফ্যাকাল্টি অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস, ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যান্ড এন্ট্রিপ্রিনিউরিয়াল সায়েন্সেস এবং ফ্যাকাল্টি অব সোশাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যানিটিস বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। গেস্ট অব অনার ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ।

অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক একটি চীনা প্রবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শিক্ষা এমন এক সম্পদ যা সর্বত্র এর মালিককে অনুসরণ করে। একজন মানুষকে অন্য সকলে ছেড়ে যেতে পারে, কিন্তু তার শিক্ষা, মূল্যবোধ সব সময় সাথেই থাকে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে আপনারা আজ এখানে এসেছেন। বলা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চূড়ান্ত ধাপটা শুরু হচ্ছে আপনাদের। এরপরেই আপনারা আপনাদের নতুন ক্যারিয়ারে প্রবেশ করবেন। শিক্ষাকে ভবিষ্যতের পাসপোর্ট বলে মন্তব্য করে এম এ মালেক বলেন, এখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়ার সময় আপনারা সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার, সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ার সেই পাসপোর্ট পাবেন। আজ যারা রিডার, আগামী দিনে তারাই লিডার হবেন।

এম এ মালেক বলেন, আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটা গল্প আছে। জীবনের পথে হাঁটার গল্প। পিছনে ফিরে গিয়ে গল্পের শুরুটা আমরা কখনো পরিবর্তন করতে পারবো না। কিন্তু চাইলেই গল্পের শেষটা আমরা নিজেদের মত করে সাজিয়ে তুলতে পারি। এর জন্য বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু দরকার ইচ্ছাশক্তি।

তিনি বলেন, আমি আশাবাদী মানুষ। যেখানে যাই আশার কথা বলি। স্বপ্নের কথা বলি। বিশ্বাস করি, আশা হলো এমন একটা জিনিস যা মানুষকে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়। সত্যিকার অর্থে আশা আর আত্মবিশ্বাস ছাড়া এ পৃথিবীতে কোনো মহৎ অর্জনই সম্ভব নয়।

পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষদের নাম উল্লেখ করে এম এ মালেক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের প্রত্যেকের মধ্যেই তাদের মত অপরিমেয় সম্ভাবনা আছে। সম্ভাবনার কোনো সীমারেখা থাকে না, সীমারেখা নেই। তাই স্বপ্ন দেখুন। নিজেকে নিজের মত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে সত্য করে করে তোলার জন্য ছুটে চলুন। বাধা আসবে, ডিঙিয়ে যাবেন। পথের বাঁকে বাঁকে প্রতিবন্ধকতা থাকবে, পার হয়ে যাবেন। কিন্তু থামবেন না। একদিন ঠিকই আপনারা গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। সফল হবেন। আপনাদের এই সফলতা আরো অনেকের মাঝেই সফলতার বীজ বোপন করে দেবে। যা দেশ এবং সমাজের অনেক বেশি কাজে লাগবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ইউএসটিসি চট্টগ্রামের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম। চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে যার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি যুগোপযোগী ও শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে সমৃদ্ধ দেশ গঠনের মানসে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন যা বর্তমানে চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে অন্যতম। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে যুগোপযোগী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদেরকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রগঠনে আমাদের যে দায়িত্ববোধ তা পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত আমাদের এই দেশ। বহু মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের লাল সবুজ পতাকা। এই দেশ এবং এই পতাকার মান আপনাদের রাখতে হবে। এক একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের মতো হয়ে আপনাদের এই দেশকে ভালোবাসতে হবে। আপনাদের চেষ্টা এবং সাধনায় আমাদের সোনার বাংলা আক্ষরিক অর্থে সোনার দেশে পরিণত হবে।

তিনি নিজের যুদ্ধকালীন সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, এই দেশ এতো সহজে আমাদের হয়নি। বহু মূল্য দিতে হয়েছে। আপনাদেরকে এই দেশটিকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য জ্ঞানে বিজ্ঞানে অগ্রসর হতে হবে।

তিনি শিক্ষার্থীদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশটিকে সবার বাসযোগ্য একটি স্মার্ট দেশে পরিণত করবো।

সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মঞ্জুরী কমিশনের মানদণ্ডে স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে যুগোপযোগী কারিকুলাম অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রদান করছে এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে দেশের অগ্রযাত্রায় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করে দেশ বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে এবং সুনামের সাথে চাকুরিরত কর্মরত আছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সুশিক্ষিত হওয়ার পাশাপশি তাদেরকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিজেদের কাজ করতে হবে। আগামীর উন্নত বিশ্বে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে স্মার্ট নাগরিক হিসেবেও নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে।

ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রামে স্বাগত বক্তব্য দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া। বক্তব্য দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ড. মাইকেল দত্ত, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান তাহমিনা খাতুন, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটেরেচার বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান ফাহমিদা আহমেদ, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান চন্দ্রা দাশ, পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. প্রণয় কুমার মজুমদার, ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর মোহাম্মদ আব্দুল মোতালেব ভুইঁয়া, ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ডিন ড. হেদায়েত উল্লাহ, ফ্যাকাল্টি অব সোশাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যানিটিসের ডিন ড. গুরুপদ চক্রবতী, ফ্যাকাল্টি অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেসের ডিন প্রফেসর এম মহিউদ্দীন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. নারায়ণ বৈদ্য, ফ্যাকাল্টি অব লাইফ সায়েন্সেসের ডিন ও উপউপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. রনজিত কুমার সাহা এবং সেন্ট্রাল এডিমশন কমিটির চেয়ারম্যান ও আইকিইএসির পরিচালক ড. অনিন্দ্য কুমার নাথ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীমান্তে কড়াকড়ি, তবুও দালালের হাত ধরে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬