সম্ভাবনাময় প্রাণিসম্পদ খাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি

| শুক্রবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি রাজধানীতে প্রাণিসম্পদ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া এন্ড দ্যা প্যাসিফিক (সিরডাপ) সম্মেলন কক্ষে ‘ প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় এলডিডিপি প্রকল্প ও দেশের প্রাণিসম্পদ খাত তুলে ধরার পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।

প্রাণিসম্পদ খাত আমাদের বাংলাদেশের বড় একটি সম্ভাবনাময় খাত। আমরা সবাই এর উপকারভোগী। এ খাতে যত বেশি উৎপাদন হবে, ততই মঙ্গল আমাদের। উৎপাদন না হলে দেশে খাদ্য ও পুষ্টি সংকট তৈরি হবে। কারণ পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে এ খাত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, বেকারদের স্বাবলম্বী করে, উদ্যোক্তা তৈরি করে, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করে। তাই জনগণের সামগ্রিক স্বার্থেই এ খাতে উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এ খাতে কাজের ক্ষেত্র অনেক বেশি সমপ্রসারিত। এর মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, উদ্যোক্তা তৈরি, বেকারত্ব দূর করা, গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করা এবং মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদার বিশাল যোগান দেওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মাংস, ডিমসহ দুধ থেকে উৎপাদিত প্রাণিজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

একসময় বিদেশ থেকে গবাদিপশু আমদানি না করতে পারলে কোরবানির সময় সংকট সৃষ্টি হতো। বিগত কয়েক বছর আমাদানি ব্যতিরেকে নিজস্ব উৎপাদনের মাধ্যমে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু থেকে যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটা একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এসব কিছুই গবেষণাধর্মী অর্জনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। বিএলআরআই এর বিজ্ঞানী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা এ সফলতার অংশ। একারণে কর্মক্ষেত্রে সৃজনশীলতা থাকতে হবে। নতুন কিছু সৃষ্টির মাধ্যমে কাজকে ব্যাপৃত করতে পারলে, বন্ধ্যাত্ব অবস্থাকে উন্মুক্ত করে দিতে পারলে তা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে পারে। ঐকান্তিক ইচ্ছা, নিরলস প্রচেষ্টা, অধ্যাবসায়, গভীর আন্তরিকতা ও সততার সমন্বয় করে নিজেকে নিবিষ্ট রাখতে পারলে গবেষকরা আমাদের অনেক কিছু দিতে পারেন বলেও বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেন।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রাণিসম্পদ খাত আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বছরে এ খাত থেকে ৪৬ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা আয় করছে সরকার। আর শুধু চামড়া বিক্রি করে আমরা বছরে ১.১ বিলিয়ন ডলার আয় করছি। এ ছাড়া মাংসজাতসহ এই খাতের অন্যান্য দ্রব্য থেকে সরকার বছরে আরও ২ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা আয় করে। তাই ব্যাপক সম্ভাবনাময় প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও উন্নত করতে সরকার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ ও বিনিয়োগ করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই খাতের সব চাহিদা দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়েই পূরণ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এ খাতে আরও উন্নয়নের জন্য সরকার প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে।

বলা বাহুল্য, দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের প্রধান চালিকা শক্তি এখন নারী। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের শ্রমে ভর করে এগোচ্ছে দেশের গবাদিপশু ও পোলট্রির সমপ্রসারণ কার্যক্রম। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ খাতে নারীর অংশগ্রহণ ৮৮ দশমিক ২ ও পুরুষের মাত্র ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ১৪ দশমিক ৫ শতাংশই প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল। আর কৃষি খাতের কর্মসংস্থানের মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অংশ ৩৫ শতাংশ। এছাড়া দেশের মোট পুরুষ কর্মসংস্থানের মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে কাজ করছে আর নারীদের মোট কর্মসংস্থানের ৪১ শতাংশই প্রাণিসম্পদসংশ্লিষ্ট খাতে। খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ পরিবারেই হাঁসমুরগি ও গবাদিপশু লালনপালন করা হয়। সাধারণত বাড়ির নারীরাই এগুলোর দেখাশোনা করেন। নারীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হলে সামনের দিনগুলোয় এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে তারা আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ খাতেও উৎপাদন বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে আয়ব্যয়ের এবং উদ্যোক্তাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যেমন গবেষণা দরকার তেমনি এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করতে সুনির্দিষ্টভাবে শিল্প এলাকা, অর্থনৈতিক এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে। তাঁরা বলেন, ‘আমরা মনে করি, দেশের অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ খাতের ব্যাপক অবদান রাখার যেহেতু অবকাশ রয়েছে সেহেতু এ খাতের জন্যও অঞ্চলভিত্তিক প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। একই সঙ্গে গোচারণভূমির থেমে যাওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নেও মনোযোগ দেওয়া দরকার। অনাবাদি জমি আবাদি হলে দানাদার শস্যসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়বে এবং তা আমাদের চাহিদার নিরিখে জরুরিও বটে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে