সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করার প্রত্যয়

চট্টগ্রামে সম্প্রীতি সমাবেশ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

আমরা সবাই বাংলাদেশি; সবাই এই মনোভাব ধারণ করতে পারলে সম্প্রীতির বন্ধন ছাড়া দেশে অন্য কোনো প্রশ্ন উঠবে না বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, চট্টগ্রামে সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সমাজের প্রত্যেকটা স্তরের মানুষকে অনুরোধ করছি। আমি যে ক্লিন সিটি বা পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রামের কথা বলছি, সেটার উদ্দেশ্য শুধু ড্রেন বা ময়লাআবর্জনা পরিষ্কার নয়, মানুষের হৃদয় পরিষ্কার করাও বটে। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সবার মন মানসিকতা পরিষ্কার করে প্রতিটা ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে চলতে হবে আমাদের। সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দেশের সকল ধরনের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে গতকাল রোববার নগরের আইস ফ্যাক্টরি রোড পিটিআই অডিটরিয়ামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের আমির মাওলানা শাহজাহান চৌধুরী, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক রাসেল আহমদ ও খান তালাত মাহমুদ রাফি।

সভায় বক্তারা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। তারা বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের যে ষড়যন্ত্র চলছে তা কখনো সফল হবে না। ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিরোধকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে চালানো হচ্ছে। সুতরাং সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে কখনও পা দেওয়া যাবে না। এ ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

মেয়র ডা. শাহাদাত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘গাহি সাম্যের গান-/ যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধাব্যবধান/ যেখানে মিশছে হিন্দুবৌদ্ধমুসলিমক্রীশ্চান।’ উদ্ধৃত করে বলেন, আমাদের এই সাম্যের বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে হবে। এই দেশ আমাদের। এই দেশে আমাদের থাকতে হবে এবং মরতে হবে। কাজেই এ দেশকে ভালোবাসতে হবে। যেভাবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমার ভাইয়েরা দেশকে ভালোবেসেছিলেন, যেভাবে ১৯৯০এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভালোবেসেছিলেন এবং যেভাবে ২৪ সালের জুলাইআগস্টের আন্দোলনে ছাত্ররা দেশকে ভালোবেসেছিলেন, সেই একইভাবে আমাদের এই সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো দৃঢ় করতে হবে। আমাদের একটাই পরিচয় হওয়া উচিতআমরা সবাই বাংলাদেশি। এই মনোভাব যখন আমাদের মধ্যে থাকবে, তখন সম্প্রীতির বন্ধন ছাড়া অন্য কোনো প্রশ্ন উঠবে না।

মাওলানা শাহজাহান চৌধুরী বলেন, এ দেশের মতো সম্প্রীতির দেশ বিশ্বের আর কোথাও নেই। ভারতকে বলছি, আপনারা চেয়েছিলেন সম্প্রীতি নষ্ট করে ফ্যাসিস্টের পুনর্বাসন করবেন। আমাদের দেশ নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে না। আমাদের দেশের সম্প্রীতি আমরা বজায় রাখতে পারব। আপনারা যার যার ধর্ম সে সে পালন করেন। প্রয়োজনে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, চট্টগ্রামে মানুষের মাঝে যে পারস্পরিক ঐক্য, সম্প্রীতি দেখেছি, তা উদাহরণ হিসেবে পরবর্তী কর্মস্থলে গিয়েও বলতে পারব। সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

রাসেল আহমদ বলেন, আমরা বাংলাদেশকে কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক হতে দেব না। চট্টগ্রাম থেকে যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া হয়েছে তা আমরা রুখে দিয়েছি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কখনো সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে পা দেওয়া যাবে না। এদেশ একক কোনো ধর্মের দেশ নয়। এ দেশ সবার। ৫ আগস্টের পর দেশের সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মন্দির, মসজিদ পাহারা দিয়েছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিরোধকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে চালাচ্ছে শেখ হাসিনা। আমরা একসঙ্গে বসে বাংলাদেশের জয়গান করছি। এটি সম্প্রীতির নিদর্শন।

খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, এই বাংলাদেশ ২০ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশকে যারা ধারণ করে তারা সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। সম্প্রীতি আছে বলেই একসঙ্গে হয়েছিলাম ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে। ধর্মকে ব্যবহার করে তারা সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আমরা যখন ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছি সেখানে কোনো ধর্ম ছিল না, দল ছিল না। আমরা সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে কোনো বিরোধ থাকবে না।

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন সিডিএর বোর্ড মেম্বার সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন, হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব জাফর আহমেদ, ইলমার প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু, রাজীব ধর তমাল, অধ্যাপক উপানন্দ মহাথের ও পি কে বড়ুয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীকে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাত
পরবর্তী নিবন্ধদাবিতে অনড় বেসরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা