সম্প্রতি সুদূর দিনাজপুর থেকে মা নিয়ে এসেছিল তাঁর দুই ছেলে সাহাদ ও সাকিবকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে। তাঁরা সম্পর্কে আমাদের আত্মীয় না হলেও স্ত্রীর অফিসের কলিগ মামুন সাহেবের আপনজন হিসেবে চট্টগ্রামে আসা। তাঁদের সাথে সরাসরি কোনো দিন কথা ও দেখা হয়নি। কিন্তু আমাদের বাড়িতে উঠার পরেই সম্পর্ক গড়ে উঠে যা অতুলনীয়। তাঁদের মা–ছেলের আদব–কায়দা, চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া এতই সুন্দর যা তাদের ও আমাদের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। একই বাসনে খাওয়া, একই কাপে চা পান, আমাদের বাসনে রান্না ও একসাথে খাওয়া, আমাদের পড়ার টেবিলে লেখাপড়া, আমাদের বিছানায় ঘুমানো, এতে কোনো ঘৃণা ও দৃষ্টিকটু নেই কিছুতেই। প্রার্থনার ক্ষেত্রেও তাই। আমাদের আসন ঘরে পূজা অর্চনা আর ওদের থাকার ঘরে মা–ছেলের নামাজ আদায়। কী অদ্ভুত সম্প্রীতি। তাঁরা দিনাজপুর থেকে আসার সময় আমাদের জন্য নিয়ে আসলো দিনাজপুরের বিখ্যাত চিনিগুড়া চাউল, রুপালি চিড়া, হাতে বানানো নাস্তাসহ ব্যাগ ভর্তি আরো কত কী! পরেরদিন সকালে যে উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে আসা আমার ছেলে প্রীতম তাঁদের সকলকে নিয়ে রওনা দিল পরীক্ষাস্থল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে আপ্যায়ন ও একটু বিশ্রামের পরেই ওদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম আমি নিজে। প্রথমেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়স লেকসহ নানা জায়গায়। আবার মার্কেট ঘুরে কেনা হলো ওদের ও আমাদের জন্য কাপড় চোপড়। এক ফাঁকে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ছিল কেমন লাগলো আমাদের ও চট্টগ্রামের সবকিছু? উত্তরে বললো অতুলনীয়। তবে আঙ্কেল দোয়া করবেন পরীক্ষায় পাস করে আমরা যেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগটুকু পায়। তাই আশীর্বাদ রইলো সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁদের আশা পূর্ণ করে।
তাঁরা এখন চট্টগ্রাম ত্যাগ করে দিনাজপুরে কিন্তু তাঁদের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভেতর যেটুকু সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সেই সম্প্রীতি এখনো অটুট রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় কারণে অকারণে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি হলেও আমাদের মধ্যে তার রেশ, বিন্দু মাত্রও ছিল না। তাই সাম্প্রদায়িকতার দিকে না তাকিয়ে আমাদের দিকে তাকাও। কেন না আমরা একে অপরের আত্মীয় না হলেও আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি আর ধর্মীয় অনুভূতি তাড়িত আবেগের কারণে একে অপরের সঙ্গে বেশ জোরালোভাবে সম্পর্কিত।
কারণ সম্প্রীতি বা বন্ধন রক্তের সম্পর্কের বিষয় নয়, যখন আমরা একে অপরের প্রয়োজনের মুহূর্তে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারবো তখন সম্পর্ক এর চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। তাই আমাদের বড় খুশির কারণ, আমরা সকল সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার ঊর্ধে উঠতে পেরেছি।