চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় এবার সেই যুবলীগকর্মী জাফরকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। সম্প্রতি অধিকতর তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল আদালতে থাকা নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় সম্পূরক এ চার্জশিট দাখিল করেন। এর আগে গত ২৪ জুলাই ২৩১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হলেও মামলার এজহারনামীয় আসামি জাফরের নাম সেখানে ছিল না। সম্পূরক চার্জশিটে বলা হয়, যুবলীগকর্মী জাফরের পুরো নাম জাফর উল্লাহ। তিনি নগরীর হালিশহর থানার মধ্যম রামপুর এলাকার হাজী আনোয়ার উল্লাহ’র ছেলে। আরো বলা হয়, চার্জশিট দাখিলের সময় জাফরের পূর্ণাঙ্গ নাম–ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ জন্য সেখানে তাকে রাখা হয়নি। পরে তার পূর্ণাঙ্গ নাম–ঠিকানা তদন্ত কর্মকর্তার হাতে আসে। এরই প্রেক্ষিতে তাকে অন্তর্ভূক্ত করে সম্পূরক চার্জশিটটি দাখিল করা হয়। এদিকে জাফরকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দাখিলের পর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম। তিনি উক্ত চার্জশিটের বিরুদ্ধে তখন নারাজি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। শুনানি শেষে আদালত সেটি খারিজ করে দিয়ে চার্জশিটটি গ্রহণ করে নেন। এরপর মামলার বাদী সেই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের ১০ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির অধিকতর তদন্ত চেয়ে রিভিশন মামলা দায়ের করলে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে বিচারক সেটি মঞ্জুর করেন। একদিকে জাফরকে অন্তর্ভূক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ বাদীর অধিকতর তদন্ত চেয়ে করা রিভিশন মঞ্জুর করেছে আদালত। এক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দাযরা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল ফারুক আজাদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, সম্পূরক চার্জশিট দিয়ে থাকলে সেটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে থাকবে। আমাদের আদালতে সে বিষয়ে তথ্য নেই। আমাদের আদালতে মামলার মূল নথি রয়েছে। বাদীর রিভিশনের প্রেক্ষিতে উক্ত নথি তলব করা হয় এবং শুনানি শেষে রিভিশনটি মঞ্জুর করা হয়েছে। এখন মামলার মূল নথিসহ রিভিশন মঞ্জুরের আদেশের কপি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে চলে যাবে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পুলিশের দেওয়া সম্পূরক চার্জশিট ও রিভিশন মঞ্জুর সংক্রান্ত আদেশ দুটি দেখে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, যেহেতু জাফর উল্লাহকে অন্তর্ভূক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, সেহেতু মামলাটি আর অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট হয়তো পুলিশের সম্পূরক চার্জশিট বিবেচনায় নিয়ে নিবে। সেই সাথে মামলাটি রেডি ফর ট্রায়াল করে পাঠিয়ে দেবে।
নগরীর চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির দৈনিক আজাদীকে বলেন, আগে ২৩১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল। অধিকতর তদন্ত শেষে গত ২২ সেপ্টেম্বর জাফরসহ মোট ২৩২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (সম্পূরক চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চার্জশিট দাখিলের সময় জাফরের পূর্ণাঙ্গ নাম–ঠিকানা পাওয়া যায় নি। এজন্য জাফরের নাম বাদ পড়ে যায়। পরে পূর্ণাঙ্গ নাম–ঠিকানা পাওয়ায় তাকে অন্তর্ভূক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আদালত সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত বছরের ৩ আগস্ট নগরীর বহদ্দারহাটে গুলিতে নিহত হন দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম শহিদ। এ ঘটনায় একই মাসের ১৫ আগস্ট তার ভাই শফিকুল ইসলাম নগরীর চান্দগাঁও থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৪ জুলাই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগের ২৩১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গত বছরের জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে হতাহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে এটিই ছিল প্রথম চার্জশিট। চার্জশিটে উল্লেখ্যযোগ্য আরো যারা রয়েছেন তারা হলেন– সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, পুলক খাস্তগীর, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের ছোড়া গুলিতে শহিদুলের মৃত্যু হয়েছে এবং তার বুক, পেট ও পিঠে মোট ১০টি গুলি লাগে বলেও চার্জশিটে বলা হয়।












