অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠা নূর উর রশীদ চৌধুরী ওরফে ‘পিএ’ এজাজ চৌধুরীকে সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারি করেন। রোববারই রাষ্ট্রীয় ডাকে তাদের গ্রামের ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।
এরআগে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুন বাগিচাস্থ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ৬ ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে নেতৃত্ব দেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, এজাজ চৌধুরী অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ইয়াবা ব্যবসা আর তদবির বাণিজ্য করে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন। এজাজ চৌধুরী পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এজাজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নোটিশ জারির বিষয়টি রোববার রাতে দৈনিক আজাদী কাছে স্বীকার করেছেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
দুদকের জারি করা নোটিশে বলা হয়, “আপনি নিজের এবং আপনার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে/বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও উহা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী এই আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে দাখিল করতে হবে।”
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে দুদক আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, এজাজের পাশাপাশি এজাজের স্ত্রী সুরাইয়া আকতার, বড়ভাই সুলতান উর রশীদ চৌধুরী ও তার পিতার সম্পদের খোঁজ শুরু করে দুদক। তবে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন এজাজের পিতা মালেক চৌধুরী। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বাদেও তপসিলী ব্যাংকগুলো থেকেও তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করে দুদক। পাশাপাশি তাদের সম্পদের খোঁজ নিতে ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, বিআরটিএ থেকেও তথ্য নিয়েছে দুদক।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, গত ২০১৯ সালের শুরুর দিকে এজাজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ নম্বর ১৮১/২০১৯। অভিযোগে এজাজকে পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরীর ‘পিএ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এজাজের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয় ২০১৯ সালের নভেম্বরে। নগরীর টেরিবাজারে “ফেমাস শপিং মল” নামের একটি অভিজাত বিপনীর কথা উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে। যেটির বাজারমূল্য আড়াই কোটি টাকার বেশি। সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে, তাছাড়া ইয়াবা ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে স্ত্রীসহ নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়েছে অভিযোগে। পটিয়া উপজেলার হরিণখাইনে নিজের গ্রামের বাড়িতে রাজকীয় তোরণ নির্মাণের কথাও রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজির দেউরিতে তার টাইলস ব্যবসা রয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে অভিযোগের শুরু থেকেই এজাজ চৌধুরীকে নিজের ‘পিএ’ নন বলে দাবি করে আসছেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘পিএস এজাজের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ১৪ জানুয়ারি এজাজ চৌধুরীকে দুদক প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে নোটিশ প্রদান করা হয়।