সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে একটি ফরম তৈরি, জমা দেওয়ার সময় ও পদ্ধতি নির্ধারণে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সম্পদের হিসাব জমা না দিলে কী হবে সেটা আমরা অবশ্যই বলে দেব– দণ্ডটা কী হবে, তার বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নেগেটিভলি না বললে পজিটিভি জিনিস আসবে না। জমা না দিলেও যা, যদি হয়– তাহলে আমি জমা দেব কেন? জমা না দিলে খবর আছে, সোজা কথা। আইনানুগ খবর আছে। খবরটা কি সেটা যখন চিঠি (ফরম) দেব, তখন বলে দেব। খবর বিডিনিউজের।
সচিব বলেন, এতদিন তো অনেক কথা শুনেছেন– জিরো টলারেন্স, হাতি–ঘোড়া। এ সমস্ত শুনে আমার লাভ নেই, আমি বলতেও চাই না। আমাদের জনস্বার্থে দুটি এজেন্ডা– একটি হল রাষ্ট্র, আর একটা হল জনগণ। যা করার, যেখানে যেটা করার আমরা করতে পিছপা হব না। আমাদের কোনো পাওয়ার রিসার্চ করতে হবে না। বিধি মোতাবেক কাজ করব, সাহসের সঙ্গে কাজ করব। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯–এর ১১, ১২ ও ১৩ বিধিতে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অনেক সরকারি চাকুরে এই নির্দেশনা মানেন না।
সরকারি চাকরিতে মোটামুটি ১৫ লাখ কর্মচারী রয়েছেন জানিয়ে সচিব বলেন, আগে আমরা মনে করতাম শুধু কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে, যারা কর দেন। কিন্তু, দেখা গেছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পিয়ন অথবা ড্রাইভার… ৪০০ কোটি টাকা বা ৯ কোটি টাকা এ রকম তো পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য মডার্ন ও আপডেটেড ওয়েতে যাতে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে পারে, সেজন্যই কাজটা শুরু করেছি। এর মূল মেসেজটা গতকালকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কবে কে কোথায় কীভাবে এ হিসাব দেবে? এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে এনবিআরের একজন প্রতিনিধি, অর্থ বিভাগের একজন প্রতিনিধি, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এই কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন।
মোখলেস উর রহমান বলেন, এখন সম্পত্তির হিসাব দিতে পাঁচ রকমের ফরম রয়েছে। কমিটি একটি ফরম্যাট তৈরি করবে, যাতে মানুষের প্রশ্ন করতে না হয়, বুঝতে সমস্যা না হয়। সবাইকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। জিরো সম্পদ থাকলেও হিসাব দিতে হবে। সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার সময় তো আপনি একটু সচেতন হবেন। দুর্নীতি প্রতিরোধে এটি প্রথম কাজ হবে কিনা বলেন? এটা একটা মেসেজ। শুধু ব্যাংক হিসাব না, জমি–জমা সঞ্চয়পত্র কোথায় কি আছে সব হিসাব দিতে হবে। সম্পদের হিসাব দিলে আমরা মনে করি দুর্নীতি কমে আসবে।
কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে এই ফরম তৈরি করবে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ফরমটি হবে বাংলায়। এটি এক পাতার মধ্যে থাকবে। স্থাবর সম্পত্তি, অস্থাবর সম্পত্তি এবং অন্যান্য সম্পত্তি– এভাবে ফরমে থাকবে। এরপর আমরা বলে দেব সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে সম্পদের হিসাব জমা দেবে। মূলত আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এটি ফাংশনাল হবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা ফরমগুলো অফিস অফিসে পৌঁছে দেব। আমরা তখন বলে দেব কোন তারিখের মধ্যে হিসাব দাখিল করতে হবে। তিনি জানান, সম্পদের হিসাব বছরে একবার দিতে হবে। সেটা হয় পহেলা জানুয়ারি, না হয় পহেলা জুলাই, বিষয়টা পরে ঠিক করা হবে।
ডিসিদের ‘ফিট লিস্ট’ প্রণয়নের কাজ চলছে জানিয়ে মোখলেস উর রহমান বলেন, যে জায়গাগুলো (২৫ জেলা) থেকে ডিসিদের প্রত্যাহার করা হয়েছে সেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে ডিসি দেওয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও সম্পদের হিসাব দিতে হবে কিনা –এ প্রশ্নে সচিব বলেন, এ টু জেড হিসাব দিতে হবে। আমাকে দিয়ে শুরু হবে, আমার যে সম্পদ, আমার একটা লোনের গাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। সরকারি বেতন খায় এমন সবাইকে হিসাব দিতে হবে।