সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর

সৈয়দ আহমেদ বাদল | রবিবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর। সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরকে বলা হয় বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার। প্রতিবছর এর উৎপাদন প্রবৃদ্ধি এবং রাজস্ব প্রবৃদ্ধি দেশের বার্ষিক জিডিপিকে সমৃদ্ধ করে থাকে। এ বন্দর আজ দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা। দক্ষিণ এশিয়ায় সমমানের বন্দর সমূহের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তাকর্মচারীদের বেতনভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি নিতান্তই অপ্রতুল। বন্দর কর্মীদের মজুরী আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিৎ ছিলো। সার্বক্ষণিক ঝুঁকি নিয়ে তাদের কর্মস্থলে নিয়োজিত থাকতে হয় কিন্তু নেই কোন ঝুঁকিভাতা।

বাংলাদেশের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিভাতা প্রচলন আছে। কর্মের ধরন বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মীরাও ঝুঁকিভাতা পাওয়ার ন্যায্য অধিকার রাখে। চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ সরকারকে দেয়া হয়। স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা হিসেবে রাজস্ব আয় থেকে এর নিজস্ব তহবিল গঠিত হয়। বন্দরের উন্নয়ন ব্যয়, কর্মীদের বেতনভাতাসহ যাবতীয় পরিচালন ব্যয় নিজস্ব তহবিল থেকেই মিটানো হয়। সরকারি বেতন কাঠামো অনুসরণেই বন্দরে নিযুক্তদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়। বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘন্টাই চট্টগ্রাম বন্দর নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু থাকে। আবহাওয়ার ১০ নং মহাবিপদ সংকেতসহ দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশেও বন্দর কর্মীদের কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে কাজের ধরন বিবেচনায় বন্দর কর্মীদের বেতন কাঠামো আন্তর্জাতিক বন্দরের মানদণ্ডে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো হওয়া সমীচীন ছিলো। নিদেনপক্ষে, অন্তত: ঝুঁকিভাতা প্রাপ্য ছিলো কর্মীদের।

চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবেই ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন, ()মেরিন বিভাগের কর্মীদের সহায়তায় বন্দরে কিছু ছোট ছোট টাগ বোট (জাহাজ) দ্বারা বহির্নোঙ্গর থেকে বড় বড় কার্গো জাহাজগুলো বন্দরঘাটে বার্থি এবং সেইলিং কার্যক্রম দিবারাত্রি পরিচালনা করা হয় যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে নিয়োজিত বন্দর কর্মীদের প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। কখনো কখনো মৃত্যু বা অঙ্গহানিও হয়ে থাকে। ()একই অবস্থা জেটি অভ্যন্তরে নিয়োজিত কর্মীদের ক্ষেত্রেও। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কাজে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি চাপা পড়ে অথবা দুর্ঘটনায় প্রায়ই মৃত্যু বা আহত অথবা অঙ্গহানী ঘটে থাকে। ()বিষাক্ত রাসায়নিক পণ্য ডেলিভারী কাজে নিয়োজিত কর্মীরা প্রায়ই তেজষ্ক্রীয়তায় আক্রান্ত হয়ে স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। () বৈদ্যুতিক কাজে নিয়োজিত কর্মীরাও প্রায়ই ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রতিদিনের কাজের ধরন ও চ্যালেঞ্জের জন্য শারীরিক আঘাত, অঙ্গহানি এমনকি প্রাণহানির ঝুঁকিও রয়েছে। এধরনের বিপজ্জনক কাজে নিয়োজিত থাকার পরও বন্দর কর্মীরা ঝুঁকিভাতা পাচ্ছেন না।

উল্লেখ্য যে, দেশে কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের দায়িত্ব পালনে ঝুঁকি বিবেচনায় মাসিক বেতনভাতার সাথে নির্ধারিত ঝুঁকিভাতা সংযুক্ত করে পরিশোধ করে থাকে। বর্তমানে ঝুঁকিভাতা প্রচলনকৃত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন, বিএসটিআই, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি, কোষ্ট গার্ড, আনসার বাহিনী, কারাগারে কর্মরত কর্মীরা, বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব ও বন বিভাগের কর্মীদের জন্য চলমান তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, পদবি অনুসারে এবং চাকরির বয়সের তারতম্য বিবেচনায় নির্ধারিত বিভিন্ন হারে মাসিক ঝুঁকিভাতা পরিশোধ করা হয় যা ন্যূনতম ১৪০০ টাকা সর্বোচ্চ ৫৪০০ টাকা। আবার একই পদে ৫ বছর চাকরিপূর্তীতে এই ভাতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা আছে।

শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থেকেও চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরতরা ঝুঁকিভাতা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে যা তাদের ন্যায্য দাবি। ঝুঁকিভাতা প্রদান করলে কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি তারা আরও মনোযোগ সহকারে এবং নিরাপদে কাজ করতে পারবে। এটি তাদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যা কর্মীদের মানসিক চাপ হ্রাস করতে সহায়ক হবে। তাছাড়া, ঝুঁকিভাতা পেলে কর্মীরা উৎসাহিত হবে এবং কর্মস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে উদ্বুদ্ধ হবে। তাই বন্দরের কর্মীদের জন্য ঝুঁকিভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযৌতুক একটি মারাত্মক অভিশাপ
পরবর্তী নিবন্ধমিথ্যে নয়