সমুদ্র মরলে আমরাও মরবো

এমরান হোসাইন | শনিবার , ২৩ জুলাই, ২০২২ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

সমুদ্র মরলে আমরাও মরবো। তার মানে সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস এবং পানির নীচে খনিজ সম্পদের অপব্যবহার সহ প্লাস্টিক দূষণে পৃথিবীর দেশে দেশে সমুদ্রদূষণ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী (সাগর-মহাসাগর) সমুদ্র সুরক্ষার আওয়াজ তীব্রতর হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা সমুদ্র-মহাসমুদ্র নিয়ে মহাবিপদের সংকেত দিচ্ছে।
প্রতিটি প্রাণীর জীবন চক্রে জলের বিকল্প নেই বললে চলে। পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় ৭০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে জল। সে অতি পরিচিত ডায়লগ- পানির অপর নাম জীবন। চলতি মাসের শুরুর দিকে জাতিসংঘের আহ্‌বানে জীবন-জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে সাগর-মহাসাগর সুরক্ষায় হাজার হাজার সামুদ্রিক বিজ্ঞানী ‘মহাসাগর সন্মেলন’-এ জড়ো হয়েছিলেন। লিসবনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন- দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা আজ সামুদ্রিক জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছি; আমাদের অবশ্যই জোয়ার ঘুরিয়ে দিতে হবে। একটি স্বাস্থ্যকর এবং উৎপাদনশীল সমুদ্র আমাদের ভাগ করা ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবী নামক গ্রহের অতি আপন নদ-নদী, সাগর-মহাসাগর। বৈশ্বিক সাগর-মহাসাগর সুরক্ষার একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে বিজ্ঞান-ভিত্তিক উদ্ভাবনে কার্য়কর পদক্ষেপ নিতে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল। এতে বিশটিরও অধিক দেশের নেতারা শোষণের বিরুদ্ধে সাগর-মহাসাগর সুরক্ষা এবং সমুদ্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করেছেন। বিশ্বনেতাদের মানবতা এবং সামুদ্রিক জীবনের জন্য সমুদ্রকে রক্ষা করার জন্য আরও বেশি কিছু করতে হবে বলে সম্মেলনে আগত নেতারা বলেন। বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত অবৈধ মাছ ধরা ও সমুদ্র দূষণের একটি কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। অবৈধ মাছ ধরার সাথে বাধ্যতামূলক শ্রম, মানব পাচার এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন জড়িত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং কানাডা মৎস্যসম্পদ পর্যবেক্ষণ উন্নত করতে এবং জবাবদিহিমূলক একটি জোট (ওয়ার্কিং গ্রুপ) চালু করেছে। সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশ্বনেতারা পশ্চিমা একাধিক গণমাধ্যমকে বলেন-আমাদের অবশ্যই বিশ্বজুড়ে অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একসাথে কাজ চালিয়ে যেতে হবে- যা সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং আইন মেনে চলা মৎস্যজীবী ও সম্প্রদায়ের জীবিকাকে বিপন্ন করে তোলে। সমুদ্র দূষণের কারণে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ প্রবালগুলো ৬০ শতাংশ বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮শ ১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র। ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অঞ্চল যা চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশ অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের উপর ভাসছে।
যার সুরক্ষা এখন সময়ের দাবি। এদিকে বৈশ্বিক সাগর-মহাসাগর সুরক্ষার প্রাথমিক অংশ হিসেবে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অর্থায়নে মধ্য ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গবেষণা পরিচালনা করবে- যেখানে গ্রহের সর্বোচ্চ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রয়েছে।
সম্মেলনে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আরবান ওশান ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিন ফ্লেমা বলেন- সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ৩০শতাংশ ভূমি এবং সমুদ্র সুরক্ষায় বিশাল অর্থ ব্যয় করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅহংকার যেভাবে একজন মানুষকে ধ্বংস করে
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে