ব্লু অর্থনীতি নিয়ে তোড়জোড় চললেও সমুদ্র বাণিজ্যে একেবারে পেছনে পড়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিশ্বে ৮০ শতাংশের বেশি পণ্য সমুদ্রপথে পরিবাহিত হলেও দেশের পণ্য পরিবহনের মতো প্রয়োজনীয় জাহাজও বাংলাদেশের বহরে নেই। ফলে দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজ; যা সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি দেশের জন্য কষ্টকর বলে সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৩ কোটি টনের বেশি খোলা পণ্য আমদানি করেছে। এছাড়া কন্টেনারে বোঝাই হয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭ টিইইউএস। উক্ত পণ্যগুলো নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে মোট ৪ হাজার ৭৭টি জাহাজ। অথচ বাংলাদেশের নিজস্ব জাহাজ রয়েছে মাত্র ১০০টি। পুরো বছর এগুলোর পরিবহন সক্ষমতা ৫০ লাখ টনের কাছাকাছি। এছাড়া কন্টেনারবাহী জাহাজ রয়েছে মাত্র আটটি। যেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের জাহাজ শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার এখন সময় এসেছে। শুধুমাত্র উদাসীনতা এবং বহুমাত্রিক দুর্নীতির কারণে জাহাজ শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
নৌ বাণিজ্য দপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের যে বিপুল ভলিউম, তাতে অর্ধেক পণ্য পরিবহনের টার্গেট নিয়েও যদি কাজ হয়, তবুও আমাদের তিন শতাধিক জাহাজ লাগবে। যে পরিমাণ জাহাজে বিনিয়োগের মতো শিল্পপতি, ব্যবসায়ী কিংবা ব্যাংকিং সেক্টর থাকলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধা, বিনিয়োগের নিশ্চয়তাসহ নানা প্রতিকূলতায় তা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলেছে, দেশের শিপিং সেক্টরের বিশিষ্টজনদের নিয়ে আলোচনা করে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা দরকার, যা দিয়ে অন্তত আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে দুই শতাধিক জাহাজের বহর গড়ে তোলা যাবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) একসময় ৩৮টি জাহাজের মালিক ছিল। কিন্তু অদূরদর্শিতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সংস্থাটি প্রায় ডুবতে বসেছিল। বর্তমানে সংস্থাটির বহরে জাহাজ রয়েছে মাত্র পাঁচটি। নিজস্ব তহবিল থেকে টাকার যোগান দিয়ে সংস্থাটি চীন থেকে আরো দুটি জাহাজ কিনছে। চলতি বছরে এই দুটি জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে বেসরকারি খাতে জাহাজ কেনার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। ২০২১ ও ২০২২ সালে নতুন করে ২৬টি জাহাজ যুক্ত হলেও এখন জাহাজ কেনার হার একেবারে কমে গেছে। বর্তমানে বেসরকারি খাতে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ৯৫টি জাহাজ সচল রয়েছে। এর সাথে সরকারি খাতের ৫টি মিলে দেশের পতাকাবাহী মোট জাহাজের সংখ্যা মাত্র ১শটি। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই সংখ্যাকে দ্বিগুণে উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে বলে সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ আজাদীকে জানান, নিজেদের বহরে জাহাজের সংখ্যা বাড়াতে পারলে আমদানি খরচ কমার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও বাড়বে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাও দেশে রাখা সম্ভব হবে। জাহাজের সংখ্যা বাড়লে শুধু পরিবহন সক্ষমতা নয়, দেশের নাবিকসহ নানা সেক্টরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।