সমুদ্র পরিবহনে বাড়ছে বিনিয়োগ

দুই বছরে ৩৭ জাহাজে লেগেছে দেশীয় পতাকা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

সমুদ্র পরিবহনে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এগিয়ে আসছে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের শুরুতে সমুদ্রগামী মাত্র ৪৩টি জাহাজ বাংলাদেশী পতাকা বহন করতো। সেখানে সরকারি নানান সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কারণে গত দুই বছরে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে নতুন করে ৩৭টি জাহাজে দেশীয় পতাকা যুক্ত করেছেন উদ্যোক্তারা। বর্তমানে বাংলাদেশী পতাকাবাহী বিদেশগামী জাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০টি। তদ্মধ্যে রয়েছে গ্যাসবাহী (এলপিজি) তিন জাহাজও। জানা যায়, বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর দেশ হলেও রপ্তানিতেও পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি হয়ে থাকে সমুদ্রপথে। দেশীয় জাহাজের স্বল্পতার কারণে আমদানি ও রপ্তানির বেশিরভাগ পণ্য বিদেশী পতাকাবাহী জাহাজে করে বহন করা হয়। আমদানির এসব পণ্য পরিবহনের জন্য বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যেতো।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালের পর থেকে খরচ পোষাতে না পেয়ে অনেক জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেন উদ্যোক্তারা। এরপর বাংলাদেশী পতাকাবাহী ৬৮টি জাহাজ থেকে কমতে কমতে ৪০-এ নেমে আসে। তবে বিগত বছরগুলোতে দেশে বড় বড় মেগাপ্রকল্পের কারণে উন্নয়ন উপকরণ কিংবা কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বিশেষ করে পাথর, সিমেন্ট ক্লিংকার, স্ক্র্যাপের পাশাপাশি এলপিজি আমদানিও বেড়ে যায়। যে কারণে পণ্য পরিবহনের জন্য জাহাজ সংগ্রহে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেন বড় বড় উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপ সংগ্রহ করেছে বড় বড় জাহাজ। নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পতাকাবাহী ৮০টি জাহাজ নানান পণ্যসহ গ্যাস, তেল পরিবহন করে আসছে। একেকটি জাহাজ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করতে সক্ষম। এরমধ্যে ৮টি রয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজ। বর্তমানে বাংলাদেশী পতাকাবাহী বিদেশগামী এসব জাহাজে তিন হাজারের মতো নাবিক বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন।
নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সরকারি ফি পাওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সনদ জারি করছে নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে অনলাইনে এনওসি ও ওয়েভার সেবা প্রদান করছে সমুদ্রগামী জাহাজের নিবন্ধন প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে চলে আসছে। ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমুদ্র বাণিজ্যেও ধীরে ধীরে সক্ষমতা আসছে। ধীরে ধীরে বড় বড় বিনিয়োগকারীরাও সমুদ্রগামী জাহাজে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। বিশেষ করে সরকারি সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ফলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন। যে কারণে গত দুই বছরে ৩৭টি জাহাজ নিবন্ধন নিয়েছে। তদ্মধ্যে কন্টেইনার ও এলপিজিবাহী জাহাজ রয়েছে। এখন এসব জাহাজ দেশীয় লাল সবুজের পতাকা বহন করেই বিদেশে যাতায়াত করবে।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মেরিন একাডেমি রয়েছে আমাদের দেশে। আরও বেশি দক্ষ নাবিক তৈরির জন্য বর্তমান সরকার মেরিন একাডেমির সংখ্যা বাড়িয়েছে। বর্তমানে ৬টি একাডেমি রয়েছে। এসব একাডেমি থেকে দক্ষতা অর্জন করে সমুদ্রগামী জাহাজে সুনামের সাথে কাজ করছেন বাংলাদেশের নাবিকরা। এখন বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়লে নাবিকদের কর্মসংস্থানও বাড়বে। আবার দেশীয় জাহাজে আমদানি-রপ্তানির পণ্য পরিবহন বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড়ের পাদদেশে খেলার সময় মাটি চাপায় শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধমানবাধিকার কমিশন ডবলমুরিং থানা শাখার সমন্বয় সভা