সমীক্ষায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল, দৈনিক ৮০ হাজার গাড়ি চলাচল করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দৈনিক গাড়ি চলছে ১০ হাজারের মতো। তাও টেক্সির সংখ্যা বেশি। এতে করে নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু এবং টোল আদায় শুরু হলেও গাড়ি এবং টোলের পরিমাণ কোনোটিই প্রত্যাশার নাগাল পায়নি। তবে সিডিএ সূত্র বলেছে, এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি ঠিকভাবে হলে যানবাহনের সংখ্যা বহু গুণ বেড়ে যাবে।
সূত্রে জানা যায়, নগরীর যান চলাচলে গতি আনা এবং শহরের একমাত্র প্রধান সড়কটির উপর চাপ কমাতে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পুরো ব্যয়ের যোগান দেয় সরকার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭শ কোটি টাকা অনুদান এবং বাকি ৫২৪ কোটি টাকা সরকার ঋণ হিসেবে প্রদান করে। ঋণের এই টাকা এক্সপ্রেসওয়ের টোল থেকে সরকারকে পরিশোধ করবে সিডিএ। এজন্য ইতোপূর্বে নির্মিত তিনটি ফ্লাইওভার টোল ফ্রি থাকলেও এক্সপ্রেসওয়েতে ১৯ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত হারে টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল পরিশোধের মাধ্যমে দশ ধরনের গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন গন্তব্যে পৃথক হারে টোল অনুমোদন দেওয়া হলেও বর্তমানে মুরাদপুর বা বেবি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে পতেঙ্গা এবং পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার বা মুরাদপুর এলাকায় নামার টোল আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে সিএনজি টেক্সির টোল ৩০ টাকা, কার ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, চার চাকার মিনিবাস ও ট্রাক ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ৬ চাকার ট্রাক ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যান চলাচলে দিতে হচ্ছে ৪৫০ টাকা।
চুয়েট ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্ট অ্যান্ড কনসালটেশন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচলের এক সমীক্ষায় উল্লেখ করেছিল, এর উপর দিয়ে দৈনিক ৮১ হাজার ৪৭১টি যানবাহন চলাচল করবে। এর মধ্যে কার ও সিএনজিচালিত থ্রি হুইলার ৩৯ হাজার ৪২৮টি, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান এবং জিপ ৬ হাজার ৫১৩টি, মিনিবাস ও পিকআপ ৫ হাজার ৩৮টি, বাস ৩ হাজার ৩৮৯টি, ট্রাক ৫ হাজার ৬৬৪টি, লরি ও ট্রেইলর ৬৭৭টি, মোটরসাইকেল ৫ হাজার ৮১৪টি, ঠেলাগাড়ি ৫৯০টি এবং রিকশা ১৪ হাজার ৩৫৮টি। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে মোটরসাইকেল, কন্টেনার মুভার চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ঠেলাগাড়ি এবং রিকশা সমীক্ষায় থাকলেও এক্সপ্রেসওয়েতে এই গাড়ির চলাচল নেই। এই চার ক্যাটাগরির গাড়ি বাদ দিলেও সমীক্ষায় উল্লেখিত অপরাপর গাড়ির সংখ্যা থাকে ৬০ হাজার ৩২টি। অর্থাৎ প্রতিদিন এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে ৬০ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচলের কথা। অথচ এখন চলছে দৈনিক ১০ হাজারের মতো। তাও অধিকাংশ স্বল্প টোলের সিএনজি।
সিডিএ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১৯ ডিসেম্বর সকাল থেকে শুরু হলেও কয়েকদিন গাড়ি চলেছে দৈনিক ৩ থেকে ৪ হাজার। বর্তমানে গড়ে দৈনিক ৩ হাজারের বেশি সিএনজি টেক্সিসহ ১০ হাজারের মতো গাড়ি চলছে। শুধু শুক্রবারে ১১ হাজারের কিছু বেশি গাড়ি চলেছে। সিডিএ নিজেই টোল আদায় করছে। দৈনিক ৫ লাখ টাকার কাছাকাছি টোল আদায় হচ্ছে।
গাড়ি চলাচল কিংবা টোল আদায় প্রত্যাশার কাছাকাছি না যাওয়ায় প্রকল্পের টোল থেকে সরকারি ঋণ পরিশোধ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যে টাকা টোল হিসেবে আদায় হচ্ছে তা দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের বিদ্যুৎ বিল, রক্ষণাবেক্ষণ এবং কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতার যোগান দেওয়া দায় হয়ে পড়বে।
তবে সিডিএর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে না পারায় কিছুটা সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে প্রকল্পটি পুরোপুরি শেষ হলে এটি সমীক্ষার হিসাব ছাড়িয়ে যাবে। তারা বলেন, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সিডিএর। ২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এ প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে ছয়টি র্যাম্প বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য র্যাম্পের সংখ্যা ৯টিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে করে এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি অনেকটা কমে গেছে। তাছাড়া বর্তমানে যে ৯টি র্যাম্প নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে তার মধ্যে শুধু একটি র্যাম্প নির্মিত হয়েছে। জিইসি মোড়ের গুরুত্বপূর্ণ র্যাম্পটি নানা প্রতিবন্ধকতায় সময়মতো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এই র্যাম্পটি না থাকায় লালখান বাজার, টাইগারপাস বা জিইসি মোড় থেকে ওঠার সুযোগ নেই।
বর্তমানে ব্যবহারকারীদেরকে মুরাদপুর অথবা ষোলশহর দুই নম্বর গেটের বায়েজিদ রোডের বেবি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার হয়ে ওয়াসা মোড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল এলাকার মানুষকে র্যাম্পে উঠতে হলে উল্টো ঘুরে যানজট ঠেলে এগুতে হচ্ছে। ফলে অনেক ব্যবহারকারী এত ঘোরাঘুরি না করে নিচের সড়ক কিংবা সাগরিকা হয়ে রিং রোড ধরে পতেঙ্গার দিকে যাচ্ছে। ফলে এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সংখ্যা প্রত্যাশার তুলনায় কমে গেছে। অপরদিকে আগ্রাবাদ, নিমতলা, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেডসহ পরিকল্পনা অনুযায়ী সবগুলো র্যাম্প নির্মিত হলে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তখন আদায়কৃত টোলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তাই সরকারের ঋণ পরিশোধে কোনো ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে না।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান আজাদীকে বলেন, বর্তমানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দৈনিক ১০ থেকে ১১ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। নির্মাণাধীন র্যাম্পগুলো চালু হলে এই সংখ্যা এক লাফে অনেক গুণ বেড়ে যাবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে জিইসি মোড়ের র্যাম্প চালু হলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।