সমালোচকরা বাংলাদেশের জনগণের সক্ষমতা সম্পর্কে জানেন না

বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী

| শুক্রবার , ১ জুলাই, ২০২২ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সমালোচকরা আসলে দেশের জনগণের সামর্থ্য জানে না, বরং তারা জাতির সামর্থ্যকে সবসময় অবমূল্যায়ন করে। তিনি বলেন, আমাদের সমালোচনাকারিরা দেশের মানুষের শক্তি, সাহস ও ক্ষমতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। নইলে তারা বারবার বাধা দেবে কেন? তারা আসলে জাতি হিসেবে আমাদের সক্ষমতাকে সবসময় অবমূল্যায়ন করে। হেয় প্রতিপন্ন করে। সবসময় যেন অন্যের কাছে হাত পেতে চলার মানসিকতায় ভোগে।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ ও ২০২২ সালের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। এদিন সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়। খবর বাসসের।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিয়ে এখানে কতগুলো প্রশ্ন এসেছে, বিরোধি দলের সদস্যরা অনেক কথাই বলেছেন। প্রথম প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার কোটি ধরা হলেও পরবর্তীতে ৩০ হাজার কোটি লাগার কার্যকরণ বিশ্লেষণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতু নির্মাণে তার সরকারের বহুদিনের প্রচেষ্টা ছিল, যার ভিত্তিপ্রস্তরও তিনি ২০০১ সালে স্থাপন করে যান। যদিও পরবর্তী বিএনপি সরকার সেই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। আর ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি ব্যয় প্রাক্কলন করে (১০ হাজার কোটি টাকা) যার কোনো বাস্তব ভিত্তি যেমন ছিল না তেমনি এরপর বহু যোজন বিয়োজন হয় প্রকল্পে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় এবং সরকারের দায়িত্ব নেয়ার ২২ দিনের মাথায় পদ্মা সেতুর পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনসেল এইকমকে নিয়োগ দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় রেল সুবিধা যুক্ত করে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নের নির্দেশ প্রধান করেন তিনি। শুরুতে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক পাঁচ-আট কিলোমিটার। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক এক-পাঁচ কিলোমিটার হয়। প্রথম ডিপিপিতে সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে তিনটির নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা রেখে নকশা করা হয়েছিল। পরে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখার বিষয়টি যুক্ত করা হয়।

সংশোধিত ডিপিপিতে বেশি ভার বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন রেল সংযোগ যুক্ত করা হয়। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত হয়। সেতু নির্মাণে পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও বাড়তি গভীরতা ধরা হয়। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ব্যয়ও। সেতু নির্মাণকালীন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময়কার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রতিশ্রুত অর্থ প্রত্যাহার করে নিলে অন্য উন্নয়ন সহযোগীরাও তখন সরে দাঁড়ায়। যদিও পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ কানাডার একটি আদালতে মিথ্যা বলেই প্রমাণিত হয়। আর নিজস্ব অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমি জানি তখন আমাদের দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভেবেছিলেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা ছাড়া এই সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে না, যে কথাটি আমাকে বার বার শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করতে পারলে তবেই করবো, কারো কাছে হাত পেতে করবো না এবং বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে ও নিজেই করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতু নির্মাণ করতে গেলে দেশিয় রিজার্ভের ওপর চাপ আশার যে আশংকা ছিল সেখানে তার একটা হিসেবে ছিল যে সেতুটি নির্মাণে প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর সময় লাগতে পারে এবং সে সময়ে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার করে যদি ব্যয় করা যায় তাহলে রিজার্ভে কোনো চাপ পড়বে না। নিজস্ব অর্থায়ণে তার সেতু নির্মাণের ঘোষণায় দেশের জনগণের স্বতস্ফূর্তভাবে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার কথাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জুজুর ভয়, অনেক কিছুই দেখানো হয়েছে, খোঁজার চেষ্টা করেছেন এধরনের বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতাটা আসলে কিসে। সেটা হচ্ছে এডমিনিস্ট্রেশন, ম্যানেজমেন্ট এবং গুড গভার্নেন্স। আর এই তিনটা শক্তি আমাদের আছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন বলেও প্রধামন্ত্রী জানান। অনেক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়ে তার সরকার প্রমত্তা পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ প্রহণ করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহিসাবরক্ষকসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধজঙ্গল সলিমপুর ঘিরে মহাপরিকল্পনায় গতি