চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপি’র দ্বিতীয় ধাপের প্রথম কর্মসূচি। আজ বুধবার বিকেল ৩টায় নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হবে। আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সবগুলো বিভাগীয় শহরে তা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রথম ধাপের কর্মসূচি হিসেবে গত ২২ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশের উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করেছিল দলটি।
এদিকে আজকের গণসমাবেশকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। এ সমাবেশে ‘১০ লাখ’ লোকের সমাগম ঘটাতে চায় দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, দলীয় কর্মী ছাড়াও সাধারণ লোকজন সমাবেশে অংশ নিবে। এ লক্ষ্যে প্রায় ১০ দিন ধরে প্রস্তুতি সভা ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। বিভাগের ১০টি সাংগঠনিক ইউনিট ছাড়াও নগরের প্রতিটি থানায় পৃথক প্রস্তুতি সভা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। বিএনপি ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও পৃথক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে বিভাগের আওতাধীন জেলা কঙবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর থেকে অনেক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিতে গতকাল চট্টগ্রাম পৌঁছান। তবে বেশিরভাগের আজকে আসার কথা রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা থেকেও অনেক নেতাকর্মী গতরাতে নগরে এসে অবস্থান করছে।
জানা গেছে, আজকের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও সিনিয়র নেতারা অংশ নিবেন। গণসমাবেশে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদত হোসেনের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।
বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন : গণসমাবেশ উপলক্ষে গতকাল সকালে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে বিপুল জনসমাগমের মাধ্যমে শেষ হবে। আমরা কোনো ধরনের ফাঁদে পা দেব না। অনেকে চেষ্টা করবে এদিক সেদিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য। আমাদের শক্তি ক্ষয় করার জন্য অনেক কিছু করবে, অনেক কিছু বলবে, অনেক গুজব ছড়াবে। এতে কর্ণপাত করবেন না, ধৈর্য্য ধরবেন। পূর্ণমাত্রার ধৈর্য্য ধরতে হবে। ধৈর্য্যের যাতে কোনো অভাব না হয়। আমরা আমাদের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাব। ওরা চাচ্ছে আমাদেরকে ডাইভার্ট করার জন্য। আমাদের সেদিকে ডাইভার্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। জনগণের জোয়ার যেখানে নামে সেখানে কোনো শক্তি বাধা দিতে পারে না।
বিএনপির গণসমাবেশ থেকে নৈরাজ্য হলে প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রন্তুত থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বাংলাদেশে আইন আছে, সংবিধান আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কোনো দলের দায়িত্ব নয় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কোনো দল যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিতে চায়, আমি আশা করব, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, তারা যাতে সেই দায়িত্বটা পালন করে। কোনো দলের ওপর যেন তারা সেই দায়িত্ব ন্যস্ত না করে। খসরু বলেন, দেশে-বিদেশে প্রমাণ হয়েছে আমরা খুবই সুন্দর শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছি। আমাদের নেতৃত্ব থেকে পরিস্কারভাবে বলা আছে, প্রত্যেকটি সভা মিছিল, কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে। এর একটাই কারণ, জনগণের ওপর আস্থা রেখে বিএনপি রাজনীতি করে। জনগণ আমাদের সাথে আছে। যেখানে লক্ষ জনতা রাস্তায় নামে ওরা লাঠির চেয়ে বেশি শক্তিশালী, একেকজন বাংলাদেশের নাগরিক লাঠি এবং চাইনিজ রাইফেলের চেয়েও শক্তিশালী। তারা যে অস্ত্রশস্ত্রের কথা বলে তার চেয়েও শক্তিশালী। আমাদের অস্ত্রশস্ত্রের দরকার নেই, লাঠিরও দরকার নেই। লাঠি নিয়ে কারা নামে, যারা নিজেরা দুর্বল তারা লাঠি নিয়ে নামে। যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেরা কিছু করতে পারে না তারা প্রতিরোধের কথা বলে।
আমীর খসরু বলেন, গণসমাবেশ বাংলাদেশের আন্দোলনের মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জ্বীবিত। যার যার এলাকায় সবাই মাঠে আছে, এটাকে সফল করার জন্য। জনগণের মধ্যে যে উৎসাহ উদ্দীপনা ও আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি, মানুষের মধ্যে যে আশা জেগেছে, যে ক্ষোভ জেগেছে, সেটাকে পূরণ করার জন্য, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাঠ পলোগ্রাউন্ড আমরা বেছে নিয়েছি। এর আগে আমরা পলোগ্রাউন্ডে সভা করেছি, বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রামে এসেছিলেন, সেটা বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় জনসভা হয়েছিল। ২০-২৫ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। আজ আমাদের নেত্রী আসবে না, কিন্তু মানুষ সংগ্রামে নেমেছে, সেটার প্রতিফলন পলোগ্রাউন্ডের মাঠে দেখতে পাবেন। সারা দেশের মানুষ পলোগ্রাউন্ড মাঠের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমীর খসরু বলেন, আওয়ামী লীগকে সরকারি দল আমি বলি না। রেজিমের অংশ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা বুঝতে পেরেছে জনগণ জেগে উঠেছে, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা আর রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করতে পারছে না। এখন তাদের মধ্যে বিএনপির সমাবেশগুলোকে বাধাগ্রস্ত করার চিন্তা ভাবনা আছে। খসরু বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা তো এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই নির্বাচন কমিশন না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত অবৈধ সরকার, অবৈধ নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যদি বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে কি বিচার বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে? তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তারা বিচার বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। এই ধরনের বক্তব্য যারা দেন দুঃখজনক, তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বজ্ঞান আছে বলে আমি মনে করি না।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, চেয়ারর্পাসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, সহ-গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান ইয়াহিয়া, কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ।