অগ্রসরমান সমাজে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ হল শিক্ষক। নাম শুনলেই মাথা নুইয়ে আসে। ভেতর থেকে এক মায়া ছড়ায় শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। জীবনের শুরুতে মা– বাবার স্নেহের পারশের পর যে মানুষটির অপরিসীম ভালোবাসা ও মায়াবী মমতায় জড়িয়ে থাকে স্মৃতির সমারোহ তা হলো শিক্ষক। দূরে বহুদূরে যতটুকু চোখ যায় ঠিক সামনে আবছা আলোয় আলোকময় হয়ে দ্যূতি ছড়ায় সেই হল শিক্ষক। ভাষায় প্রকাশ করা অসীম– শিক্ষকের সম্মান ও শ্রদ্ধার জায়গাটা। কালের পরিক্রমায় একশ্রেণির উন্মাদ মানুষের কাছে শিক্ষক হয়ে উঠেছে হামলা, বঞ্চনা ও নিপীড়নের স্বীকার। গত ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হঠাৎ ছাত্রনামধারী কিছু উচ্ছৃঙ্খল অবুঝ সন্তানদেরকে ব্যবহার করে স্বার্থান্বেষী মহল ফায়দা লুটার জন্য এক জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এতে হামলা, মামলা ও নিপীড়নের স্বীকার হয় প্রিয় শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক সমপ্রদায়। দেশের মুক্তমনের মানুষগুলো বাকরুদ্ধ হয়ে দূর আকাশের দিকে চেয়ে আছে। ভাবতে অবাক লাগে এসব শিক্ষক কি এতোদিন দেশ ও জাতির জন্য কিছুই করেনি। আমাদের প্রিয় সন্তানেরা যারা মেধার প্রমাণ স্বাক্ষর রাখতে গিয়ে মরণপণ লড়াই করে জীবন উৎসর্গ করেছেন তারা তো এমন দেশ চায় নি। আমাদের প্রিয় সন্তানতূল্য ছাত্ররা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বুক পেতে জীবনের মায়া ত্যাগ করে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সোনালি বাংলাদেশ বির্নিমাণের যে শপথ নিলো তাতে কালিমালিপ্ত করল প্রিয় শিক্ষকদের উপর অমানুষিক নির্যাতন ও হামলা। এমনকি জোর করে পদত্যাগ করার নতুন এক ফর্মুলা। শিক্ষকরা কি আজকের সমাজে অপাংক্তেয়! প্রশ্ন রাখছি জাতির কাছে! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন সব দৃশ্য আজ অবলোকন করছি তা কল্পনা ও করেনি কোনো দিন!
মানুষ হিসাবে শিক্ষকরা দোষ–ত্রুটির উর্ধ্বে নয়, তাই বলে চিরাচরিত নিয়মকে উপেক্ষা করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে এমন লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার মুখোমুখি হতে হবে তা শিক্ষক সমাজ ভাবেননি। জাতি হিসাবে আমরা আজ লজ্জিত। ছাত্র –শিক্ষকের মধুর সম্পর্ক আজ মৃতপ্রায়। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই নোংরা মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখলো পুরো পৃথিবী। আজ বিবেকের তাড়নায় নিজেকে শিক্ষক হিসাবে পরিচয় দিতে কুণ্ঠাবোধ করি। জানি আঁধারের বাঁধ ভেঙে আলো আসবে, কিন্তু রেখে যাওয়া ক্ষতচিহ্ন কখনো কি ঘুচবে সমাজের প্রিয় শিক্ষকগুলোর মানসপটে! আসুন উঠে দাঁড়াই! প্রতিহত করি এসব স্বার্থান্বেষী মহলগুলোকে। ছাত্রদের বলবো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অবয়বে নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলো। শ্রদ্ধার আসনে আলোকপাত করো তোমাকে দেখানো পথের পথিক প্রিয় শিক্ষককে। শিক্ষক সমাজ এখনো সমাজে অপাংতেয় নয়! শিক্ষক সর্বদা সম্মানের ও শ্রদ্ধার।