সমাজে অবহেলিতদের নাম ‘পথশিশু’

মহিউদ্দীন ইমন | বুধবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

শিশু শব্দটার সাথে মিশে আছে ভালোবাসা, আদর এবং মমতা। কিন্তু শিশুদের যখন পথশিশু, টোকাই, রাস্তার ছেলে ইত্যাদি নামে ডাকা হয় তখন বুকে লাগে। কেন একটা শিশুকে পথশিশু বলবো? জানি এর কোনো গ্রহণযোগ্য উত্তর নেই। এরপরও আমাদের দেশে পথশিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আসলে এর মূলে রয়েছে অজ্ঞতা, দারিদ্রতা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব।

সামপ্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পথশিশুদের ৮২ শতাংশই নানা ধরনের পেটের অসুখে আক্রান্ত। এই অসুখের পেছনে যে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ দায়ী, তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে থাকার কারণে এদের মধ্যে চর্মরোগের হারও অনেক বেশি, চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায়। ভাসমান এই শিশুদের ৬১ শতাংশই কোনো না কোনো চর্মরোগে আক্রান্ত। পথশিশুদের মধ্যে নানা ধরনের সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার হারও তুলনামূলক বেশি।

সারাদেশে পথশিশুদের নিয়ে অনেক বেসরকারি সংগঠন কাজ করে। কেউ খাবার দেয়। কেউ পোশাক দেয়। কেউ দেয় শিক্ষা। কেউ আবার তাদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করে। তবে দিনশেষে তাদের পথেই ফিরে যেতে হয়। তাদের পুরোপুরি পুনর্বাসনের জন্য খুব বেশি উদ্যোগ নেই। শহরে অনেক বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ আছে এই পথশিশুদের জন্য। সরকারি কিছু উদ্যোগও আছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগই টেকসই নয়। এটা ঘায়ে মলম দেয়ার মতো। আসলে তাদের দরকার স্থায়ী পুনর্বাসন। ফ্যামিলি অ্যাটাচমেন্ট। সেটা কীভাবে করা যায় তা সরকারকে ভাবতে হবে। তাদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনাই হলো আসল কাজ। তাদের শিক্ষা, থাকার স্থায়ী জায়গা এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব বাচ্চারা যদি কোনো গাইড লাইনের ভেতর দিয়ে না যায় তবে তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত অন্ধকারে।

এখন দেখা যায় পরিবারের সাথে থেকেও ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যায়। সেখানে রাস্তায় থাকা এসব ছেলেমেয়েদের বিপথে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার বলে আমার মনে হয় না। তাই তাদের সরকারের সহয়তায় হোক আর বেসরকারি সহয়তায় হোক থাকাখাওয়া এবং পড়াশুনার মাধ্যমে অন্যান্য বাচ্চাদের মতো জীবনযাপন করার সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই পথশিশু নামক কোনো নাম শিশুর সাথে যুক্ত হবে না। শিশু থাকবে শিশুর মতোই। কিন্তু পথশিশুর ঠিকানা যদি পথই রয়ে যায় তবে এসব শিশুর জন্য লোক দেখানো ভালোবাসায় কিছুই হবে না। আপনি একশটা শিশুকে লোক দেখানো সেবা না দিয়ে একটা শিশুর দায়িত্ব নিন। যেন সেই শিশুটা বড় হয়ে মানুষ হয়ে উঠে। এভাবে প্রতিটা সংগঠন যদি পথশিশুদের সাময়িক সেবা এবং খাবার না দিয়ে তাদের পুরো দায়িত্ব নেয়, তাহলে অন্তত কিছু শিশুও দেশের সম্পদে রূপান্তরিত হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, আমরা চাইলেই সব পারি। কিন্তু আমরা সেভাবে চিন্তা করি না। আমরা জন্মদিনে পথশিশুদের সাথে সময় কাটিয়ে মানুষকে ফেসবুকে দেখাই। কিন্তু কয়েকটা পথশিশুকে শিশুতে রূপাস্তর করি না। চাইলেই কিন্ত পারি। তাই আসুন, লোক দেখানো ভালোবাসা ছেড়ে এসব শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসার চেয়ে ভালো রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
পরবর্তী নিবন্ধকৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য চাই