সমাজের স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক অগ্রগতি

| শনিবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক ব্যবসায়ী জরিপে বলা হয়েছে, দেশে ব্যবসা সমপ্রসারণে প্রধান তিন বাধাদুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও পুঁজির সীমাবদ্ধতা। এছাড়া উচ্চ আয়কর, মূল্যস্ফীতি এবং বিভিন্ন বিলের কারণে ব্যবসায় ব্যয় বাড়ছে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা নেই। বাড়ছে টাকা পাচার। এসব বিষয়ের সামগ্রিক প্রভাবে টিকে থাকতে পারছে না শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২ বছরে অর্থনীতির জন্য পাঁচটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলোবিশ্ব অর্থনীতির চাপ, ভূরাজনৈতিক সমস্যা, পরিবেশগত, সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত ঝুঁকি। আর ব্যবসায় খরচ কমাতে আমদানিরপ্তানি পর্যায়ে দুর্নীতি কমাতে হবে। এছাড়া সামপ্রতিক সময়ে র‌্যাবের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এর প্রভাব ব্যবসাবাণিজ্যে পড়লে বড় মূল্য দিতে হবে। তবে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ভিশন দেশের জন্য ইতিবাচক বলছে তারা।

এতে বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা ২০২১ সালে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে মোট ১৬টি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে বড় সমস্যা তিনটি। ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করে, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে মূল সমস্যা দুর্নীতি। বিশেষ করে মাঝারি, ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ৮৩ ভাগই দুর্নীতিকে বড় সমস্যা মনে করে। ফলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকা উচিত। ৬৭ শতাংশ মনে করে, অদক্ষ প্রশাসন অন্যতম সমস্যা। পুঁজির সংগ্রহে নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলেছে ৫৪ শতাংশ। ৪৫ শতাংশ ব্যবসায়ীর মতে অন্যতম সমস্যা অবকাঠামো। এছাড়াও ৩৬ শতাংশ বলছে, নীতির ধারাবাহিকতা এবং ৩৪ শতাংশের মতে উচ্চ কর। এছাড়াও ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যার কথা বলছে সেগুলো হলো করের নীতিতে জটিলতা, অদক্ষ জনবল, পর্যাপ্ত উদ্ভাবনের অভাব, বিভিন্ন অপরাধ ও চুরি, সরকারের অস্থিতিশীলতা, নৈতিকতা, মূল্যস্ফীতি এবং শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা। ব্যবসায়ীদের মতে, এসব কারণে বাংলাদেশের ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে। ফলে উল্লেখযোগ্য অংশ বাজারে টিকে থাকতে পারছে না। ব্যবসায় টিকে থাকতে ২৮ শতাংশ ব্যবসায়ী ব্যয় কমানোর কথা বলছে। নতুন ক্রেতা খোঁজার কথা বলছে ২২ শতাংশ। ১৯ শতাংশ বলছে, ব্যবসা সমপ্রসারণের কথা এবং রপ্তানি নতুন বাজার খোঁজার আগ্রহী মাত্র ১৬ শতাংশ ব্যবসায়ী। ১৫ শতাংশ বলছে নতুন পণ্য। এসব ব্যবসায়ী বলছেন, করোনা থেকে উত্তরণের কথা বলা হলেও কমপক্ষে ৩ বছরের আগে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। ৪২ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করে, বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে চাপ রয়েছে। অন্যদিকে ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ীর মতে, আগামী ১০ বছরে দেশের ব্যবসাবাণিজ্যের সবচেয়ে বড় বাজার হবে ডিজিটাল সেবা। এছাড়াও ডেটা বিজনেস এবং প্লাস্টিক রিসাইক্লিং অন্যতম। অন্যদিকে আগামী ২ বছরে বৈশ্বিক ৫টি ঝুঁকি বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবে।

এর মধ্যে অন্যতম হলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি। বড় দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশের যে ঋণ রয়েছে, তা অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে। কিছু শিল্পে বিপর্যয় আসবে। দ্বিতীয়ত, ভূরাজনৈতিক কিছু সমস্যা সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিপর্যয়, স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী আক্রমণের আশঙ্কা। তৃতীয় সমস্যা হলো পরিবেশগত ঝুঁকি। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা এবং মানবসৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা। চতুর্থ সমস্যা সামাজিক। বিপুলসংখ্যক লোকের বেকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন রোগ এবং নিরাপত্তা অন্যতম। ব্যবসায়ীদের বিবেচনায় আগামী ২ বছরে সর্বশেষ সমস্যা হবে প্রযুক্তিগত ঝুঁকি। তাদের মতে, ডিজিটাল প্রযুক্তির কথা বলা হলেও ডিজিটাল কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সে ১১০টি দেশের মধ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩। অন্যদিকে ডিজিটাল প্রযুক্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে।

এতোসব সমস্যা সত্ত্বেও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশ সংকট মোকাবেলা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এক বিরল সংস্কৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থনীতির বেলায় কথাটি আরো বেশি প্রযোজ্য। বিশ্বব্যাপী এই করোনাকালেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই রয়েছে। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, গ্লোবালি কোনো ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন বা ফ্রি ইকোনমিক জোনের সঙ্গে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়া উচিত। যেখানে যেখানে আমাদের বাইলেটারাল প্রসপেক্ট আছে, সেখানে সেখানে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে মজবুতভাবে সংযুক্ত করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যবসাক্ষেত্র তথা সমাজকে দুর্নীতি ও সহিংসতামুক্ত রাখতে আমাদের সবাইকে আরো বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। সমাজে শান্তি বিরাজ করলে অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে