সমসাময়িক সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে নারী নির্যাতন অন্যতম। বর্তমানে নারী নির্যাতনকে এক প্রকার সামাজিক ব্যাধিও বলা যায়। ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে নারীরা যখন দৈহিক ও মানসিক ও সামাজিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং অন্যের দ্বারা বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার হয় তখন তা নারী নির্যাতনের পর্যায়ে পরে। তৃতীয় বিশ্বের মত পশ্চাদপদ সমাজে নারীরা দীর্ঘকাল ধরেই নির্যাতনের শিকার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে পুরুষের সমকক্ষ হিসেবে ভাবতে শেখায় না, ফলে পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে নারীরা। নির্যাতনের মূল কারণ হচ্ছে পুরুষের তুলনায় নারীর নিম্ন সামাজিক মর্যাদা। নারী নির্যাতনের ঘটনা ইদানীং এতই বেড়ে চলেছে যে তার সমাজে মহামারী আকার ধারণ করছে। নারীরা গণপরিবহন, রাস্তায়, বিপনী বিতানে এবং জনবহুল এলাকায় ও বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারীর আত্মমর্যাদা বাড়াতে নিজেদেরই সতর্ক হতে হবে এবং আওয়াজ তুলতে হবে। জন্মের পর থেকেই নারী শিশুরা নানাভাবে বৈষম্যতার স্বীকার হয়ে থাকে। প্রতিটি পরিবারেই যদি শিশুকাল থেকেই নারীদের সম্মান দান করা হয় তাহলে সমাজে ও নারীরা সম্মান পাবে। অপার সম্ভবনার অধিকারী নারীদের বিকাশ সম্ভব হয় না যথাযথ সুযোগ এবং সঠিক মূল্যায়নের অভাবে। আজকাল নারীর জয়গান গাওয়া হলেও এখনো তাদের সহ্য করতে হয় নানা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসাগুলোতেও অহরহ ঘটছে ধর্ষণ ও বিভিন্ন ধরনের নারী নির্যাতনের ঘটনা। নারী শিক্ষার হার অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি করতে হবে। নারীর অধিকার সম্পর্কে প্রত্যেক নারীকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের দেশের নারী নির্যাতনের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে নারী নির্যাতনকারী অপরাধীরা জঘন্যতম অন্যায় করে ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। অপরাধীরা অপরাধ করেই সমাজে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই অপরাধীদের যোগ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে নারীদের বিরুদ্ধে শারীরিক সহিংসতার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে সাইবার বুলিং এর মত জঘন্যতম অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের সঠিক বিচার ও দমন করার জন্য নেই কোন প্রশাসনিক তৎপরতা ও যথাযথ উদ্যোগ। এ অবস্থায় সমাজ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেও যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নারীরা এখন সর্বক্ষেত্রে তাদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখছে এবং দেশের সুনাম রক্ষা করছে। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারী উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে।