‘সকলে মিলে করি কাজ/হারি জিতি নাহি লাজ’ অথবা ‘একতাই বল’ এসব মূলমন্ত্রকে মনে ধারণ করে এলাকার সমাজ সেবায় উৎসাহী ব্যক্তিত্ব কর্তৃক বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্রীড়া ইত্যাদি পতাকাবাহী সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এলাকার সমাজসেবক, বুদ্ধিজীবী, বিদ্বান ও দানবীরদের আন্তরিক সহযোগিতায় এসব সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন, হরেক রকমের ক্রীড়া অনুষ্ঠান, সামাজিক–বিনোদনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ, সমাজের গুণী ব্যক্তিত্বদের স্মরণে বার্ষিকী উদযাপন, শিক্ষার্থীদের বিদায় বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জনকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, এলাকাকে চাঁদাবাজ–মাস্তান–নেশা–কলুষমুক্ত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি অসুস্থ–দুস্থ–অসহায় মানুষদের প্রয়োজনীয় সহায়তা, ধর্মীয় এবং গণশিক্ষাসহ ইত্যাদি ধরনের বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। কাজেই একথা নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে, দেশ তথা সমাজকে আলোকিত করার জন্য প্রকৃত সামাজিক সংগঠনসমূহের ভূমিকা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়।
এক সময়ে প্রতি মহল্লা বা পাড়ায় একাধিক সামাজিক সংগঠনের কার্যক্রম চলমান ছিল। ফলে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা থাকায় সমাজের মানুষ উপকৃত হতো। তৎসময়ে এ সব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক এলাকার উন্নয়ন ও সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণপূর্বক তা বাস্তবায়ন করা হতো। ফলে সমাজের দুষ্টু প্রকৃতির চাঁদাবাজ, ইভটিজার বা নেশাগ্রস্ত যুব সমাজ এদের ভয়ে সর্বদা আতঙ্কিত থাকতো তথা মন্দ কোন কর্ম করার তেমন সাহস পেত না। কাজেই এলাকা মন্দের প্রভাব হতে মুক্ত থাকায় প্রায় সকলের মনেই শান্তি বিরাজ করতো। নির্বাচনের পূর্বে নিজ এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বীদের একই মঞ্চে নির্বাচনের ইজতিহার ঘোষণা করার ব্যবস্থা করায় বিজয়ী কর্তৃক নির্বাচনী ওয়াদা পর্যায়ক্রমে পালন করা হতো।
ছাত্র জীবনে এ ধরনের একটি সামাজিক সংগঠন ‘চন্দনপুরা ড্যাফাডিলস ক্লাব’ এর প্রতিষ্ঠাতা এজিএস হওয়ার সুবাদে এলাকা জঞ্জালমুক্ত বিশেষ করে নেশামুক্ত করার সময়ে গুটিকয়েক মন্দ লোকের চোখের শোল হলেও অধিকাংশ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার ঘটনা মনে হলে এখনো নিজের জন্মকে ধন্যই মনে হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী হলেও একই সংগঠনের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার কারণে এক সময়ে সমাজে সকলের মাঝে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করতো। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতাবলম্বী হওয়ার কারণে বর্তমানের ন্যায় এতো বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, মিথ্যা মামলা দায়ের, এমন কী হত্যাকাণ্ডের ন্যায় জঘন্য অপকর্ম কল্পনাও করা যেত না। অধিকাংশ সমস্যা সংগঠনের নেতৃত্বে সমাধানপূর্বক চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টির সহায়ক ভূমিকা পালন করতো। সমাজের কারো বিয়ে বা মেজবানে এসব সংগঠনের সদস্যগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অহঙ্কারের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করতো। তেমনিভাবে মৃত্যু সংবাদও সংগঠনের নিজস্ব মাইকের মাধ্যমে গোটা এলাকায় প্রচারের ব্যবস্থা করা হতো।
খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বর্তমানে এ ধরনের মানবিক সংগঠনের সংখ্যা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। ফলে একদিকে বিশেষ করে বেকার যুব সমাজ সময় কাটাবার মতো পরিবেশ না পাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে অপরদিকে সমাজে ভালো কাজের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এ জন্যই জ্ঞানীজনেরা অলস মস্তিষ্ককে শয়তানের কারখানা হিসেবে অভিহিত করেছেন। বর্তমানে সমাজে খেলার জন্য খোলামেলা মাঠ না থাকায় এসব সংগঠন কর্তৃক পূবের্র ন্যায় বিভিন্ন ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয় না। অভিজ্ঞ মহলের মতে বিশেষ করে এলাকার স্কুল–কলেজের নিজস্ব মাঠ এসব জনহিতকর সংগঠনকে শর্ত সাপেক্ষে ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হলে তারা বর্তমানের তুলনায় অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং তাদের থেকে সমাজ তথা এদেশের মানুষ বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হবে।