সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে

| সোমবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বয়ে চলেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এছাড়া উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে সারা দেশেই বইছে কনকনে ঠান্ডা। শীতের দাপটে স্থবির হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর জনজীবন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বৃষ্টির মতো পড়া কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে মানুষ বের হচ্ছে কম। বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটেখাওয়া দরিদ্র মানুষরা। জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই বের হতে হচ্ছে। ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেক জায়গায় সাহায্য হিসাবে শীতবস্ত্র এখনো পৌঁছেনি। সেখানকার শীতার্ত মানুষরা শীতবস্ত্রের জন্য প্রশাসন ও বেসরকারি পর্যায়ে আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান, ট্রেন ও নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, সমাজের অবহেলিত মানুষকে শীতের নিদারুণ কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দিতে প্রতি বছর শীত মৌসুমে সরকারিবেসরকারি উদ্যোগে সহায়তা প্রদান করা হয়। বলা বাহুল্য, এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এক্ষেত্রে সঠিক বণ্টনের অভাবের কথাও শোনা যায়, শোনা যায় অনিয়মের কথাও। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এবার শীতবস্ত্র বিতরণে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অতি জরুরি। এবার যেহেতু শীতের প্রকোপ বেশি হবে, তাই সবার উচিত হবে সহযোগিতার হাতকে আরো বেশি প্রসারিত করা। বিশেষ করে বিত্তবানসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে উদার হাতে। বিলাসিতাকে পাশ কাটিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষাকে বিকশিত করতে পারে তরুণপ্রজন্মও।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শীত এলে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কথা শোনা যায়। সমাজের সামর্থ্যবান জনদরদি মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কম্বল, শীতবস্ত্র, খাবার ইত্যাদি গ্রামে গ্রামে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন। তরুণ যুবকেরা মহল্লায় মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরোনো কাপড় সংগ্রহ করেন এবং তা গরিবদের মধ্যে বণ্টন করেন। শীত এলে এসব ছিল চিরচেনা সামাজিক কর্মকাণ্ড। এবার সেই উৎসাহউদ্দীপনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তাঁরা বলেন, শীতার্ত মানুষের সাহায্যার্থে প্রথমে এগিয়ে আসার কথা রাষ্ট্রের। নানা সংস্থা, সংগঠনকেও শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। মিডিয়া চাইলে তাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিতে পারে। চাইলে গণমাধ্যম কর্মীগণ শীতার্তদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করতে পারেন। দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিত্তশালীদের। লেখক মো. আনোয়ার হোসেন এক সুন্দর প্রস্তাবনা দিয়েছেন পত্রিকার মাধ্যমে। তিনি বলেন, শীতার্ত মানুষদের তালিকা করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনকে কাজে লাগানো যায়। তালিকা ধরে প্রত্যেক শীতার্ত মানুষের কাছে শীতবস্ত্র ও আর্থিক সাহায্য পাঠানোর কাজটি সরকার করতে পারে। তবে শীতার্ত মানুষের এসব বস্ত্র, অর্থসহ সব সাহায্য যেন দুর্নীতিমুক্ত ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দুর্গতদের কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিতরণ ব্যবস্থা যেন ত্রুটিমুক্ত হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। অন্যান্য সংস্থাও তাদের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ সমন্বিত একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করতে পারলে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে শীতের কষ্ট থেকে রক্ষা করা যাবে। মানুষের অসহায়ত্বের এমন দৃশ্য মুছে দিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে প্রতিবছর শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাতে অনেক মানুষ উপকৃত হলেও এ কার্যক্রমে পুরোপুরিভাবে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসে না। কারণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। তাই প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের উচিত কোনো না কোনোভাবে আমাদের প্রতিবেশী, গরিব অসহায়, বৃদ্ধ ও শিশুদের মাঝে শীতের বস্ত্রদান করে পাশে দাঁড়ানো। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সংগঠনসহ প্রত্যেক নাগরিক যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে হাসি ফুটবে কিছু অসহায় মানুষের মুখে। এর ফলে আমরা সভ্য সমাজে সবাই মিলেমিশে বাস করতে পারব। আমাদের মনে রাখা জরুরি যে একটি পুরোনো কিংবা নতুন শীতবস্ত্র একজন শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণের অবলম্বন হতে পারে। সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে