সমাজসেবাই যার জীবনের ব্রত ছিলো

রুমানা নাওয়ার | বুধবার , ৯ জুন, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

আবদুল মালেক চৌধুরী একজন নিভৃতচারী সমাজসেবী। আদর্শ আর নীতি কে আঁকড়ে ধরে আজীবন জনকল্যাণে কাজ করে গেছেন।উত্তর ফটিকছড়ির অবহেলিত জনপদ হেয়াকোর উন্নয়নে যার অবদান অগ্রগণ্য। তিনি ১৯৬৫ সালে তৎকালীন দাঁতমারা -বাগানবাজার ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় বাংলাদেশে আসা ভারতীয় শরণার্থীদেরকে ৩ মাস ধান -চাল দিয়ে ভরন পোষণের পর ৩টি শরণার্থী ক্যাম্প খুলে সরকারিভাবে রেশনের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। এসব শরণার্থীরা পরে এলাকায় নাগরিকত্ব গ্রহণপূর্বক স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। ২য় দফায় দাঁতমারা বাগানবাজার আলাদা ইউনিয়ন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে তিনি দাঁতমারা ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান থাকাকালে নিজের ভিটাজমি বিক্রী করে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি হেয়াকো বনানী ডিগ্রী কলেজের জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা, হেয়াকো বনানী উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, হেয়াকো দাখিল মাদ্রাসা, হেয়াকো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাসহ একাধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার পরে তিনিই একমাত্র হেয়াকো থেকে দাঁতমারা ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইউপি সদস্য ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তৎকালীন রামগড় ইপিআর সদস্যদের জন্য ট্রাকে করে নিজের গোলার ধান পাঠান।এর পর পাকিস্তানি আর্মি আসলে উনি এক কাপড়ে পালিয়ে শ্বশুরবাড়ি হাসনাবাদ চলে যান। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। যুদ্ধকালীন বাস্তুহারা ছিলেন। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক নারায়ণ হাট হেয়াকো সড়কে ২টি কাঠের ব্রীজের কার্যাদেশ দেন।একটি নারায়ণ হাট বাজারের উত্তরে আর একটি জুজখোলা নন্দীর স্কুলের সাথে।উক্ত দুটি ব্রীজের কাজে কাঠ ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে জনাব আলী আহম্মদ কবিরাজ সাহায্য করেন। মূলত উনার সাহায্যে উনি উক্ত দুটি ব্রীজের কাজ শেষ করতে পারেন।আবদুল মালেক চৌধুরী সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা হেয়াকো বনানী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫-৮০ পর্যন্ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।১৯৮০ সালে সরকার স্বীকৃতি বাতিল করে এবং অনুদান বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে তৎকালীন উপ প্রধান মন্ত্রী জামাল উদ্দীনের সহায়তায় পুনরায় স্বীকৃতি লাভ করে। প্রায় ২ বছর স্বীকৃতি বিহীন স্কুলের ফান্ড নিঃস্ব হয়ে যায়। আবদুল মালেক চৌধুরী তৎকালীন মন্ত্রী জামাল উদ্দীনের বাসায় ও অফিসে বারবার ধর্ণা দিয়ে নিজের ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে স্কুলটি সচল রাখেন।এবং স্বীকৃতি পাওয়ার পর উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধত্রাণে নয় দুঃখ ঘুচবে টেকসই বেড়ি বাঁধে
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টিতে সুখে দুখে