চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আলাওল হলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট, হলের ডাইনিংয়ে খাবারের নিম্নমান, ওয়াইফাই সেবার সমস্যা ও হলের কর্মচারীর অসহযোগিতামূলক আচরণসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। দীর্ঘদিন ধরে নানা অব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে সর্বপ্রথম নির্মিত চবির এ হলটি। এতে ভোগান্তিতে দিন পার করছেন হলটির প্রায় চারশ আবাসিক শিক্ষার্থী। সমস্যাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনকে বারবার অবহিত করলেও তা সমাধান হয়নি। এ নিয়ে কয়েকবার শিক্ষার্র্থীরা হলের কার্যালয়ে তালা দিয়ে আন্দোলন করতেও দেখা গেছে। সবশেষ গত মঙ্গলবার সুপেয পানির তীব্র সংকটের কারণে হলের সামনে খালি বোতল নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি করেন শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হলের সুপেয় পানির সমস্যায় অতীষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস এলাকায় আগে এক সময় পানিতে আইরন ছিল না। তখন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে ট্যাপ থেকে পানি পান করতে পারতো। কিন্তু গত ৫–৬ বছর ধরে চবি ক্যাম্পাসের আশপাশে পানিতে প্রচুর আইরন দেখা যাচ্ছে। এ পানি ফিল্টারিং করা ছাড়া খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু প্রায় চারশ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র চারটি পানির ফিল্টার রাখা হয়েছে। আশপাশে কটেজে অবস্থান করা অনেক শিক্ষার্থীও হল থেকে পানি নিয়ে থাকে। এরমধ্যে দুইটি ফিল্টারই অচল হয়ে আছে। ভালো দুটি ফিল্টার থেকেও পর্যাপ্ত পানি নেওয়া যায় না এবং এগুলো মেরামতের কয়েকদিন পরই ফের নষ্ট হয়ে যায়। পানি নিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় দুই লিটারের একটা বোতল পুরাতেই লেগে যায় আধা ঘণ্টা। এতে প্রায় সময়ই পার্শ্ববর্তী এফ রহমান হল ও বাহির থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয় শিক্ষার্থীদের।
এছাড়া, সাধারণ ব্যবহৃত পানিতে অতিরিক্ত আয়রন ও ময়লা থাকায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ওয়াইফাই সেবায়ও নাজেহাল অবস্থা। সংযোগের স্পিড কম হওয়ায় ওয়াইফাই যেন নামে আছে কাজে নেই। এতে অনলাইন ক্লাস ও প্রয়োজনীয় ব্যবহারে তীব্র ভোগান্তিতে আছেন শিক্ষার্থীরা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত বারান্দা–ওয়াশরুমগুলো পরিষ্কার করছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। হলের সেমিনার লাইব্রেরিতে দৈনিক কয়েকটি পত্রিকা থাকলেও নেই মূলধারার অন্যান্য পত্রিকাগুলো। আগের কিছু বই থাকলেও নেই সময়োপযোগী পর্যাপ্ত বই। এছাড়া হলের খেলাধুলার সরঞ্জামেও রয়েছে সংকট। আর হলের ডইনিংয়ের খাবারের ব্যাপারে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাবারের নিম্নমান, বিট লবণের ব্যবহার, খাবারে কাঁচা গন্ধ ইত্যাদি অভিযোগ দীঘদিনের হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি। ৫ আগস্টের পর হলে বৈধভাবে সিট বণ্টন হয় প্রায় আট বছর পর। এরপর শিক্ষার্থীরা ভেবেছিল এসব সমস্যা হয়ত আর থাকবে না। কিন্তু সমস্যা রয়েই গেল।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনকে বারবার সমস্যাগুলো জানানো হলেও নেয়নি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। নৃবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আজিম সাগর বলেন, আমাদের হলে বিশুদ্ধ পানির যথেষ্ট সংকট রয়েছে। হলের এতগুলো শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র চারটি পানির ফিল্টার। এর মধ্যে দুটি ফিল্টার নষ্ট হয়ে আছে। ভালো দুটি ফিল্টার থেকেও পর্যাপ্ত পানি নেওয়া যায় না। কিছুক্ষণ পানি সংগ্রহ করলেই শেষ হয়ে যায়। আবার এগুলো কয়েকদিন পরপর নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, বিশুদ্ধ পানির সংকটে অনেক শিক্ষার্থীর শরীরে চর্ম রোগের মত বিভিন্ন উপসর্গ দেখা গেছে। আমি নিজেও আক্রান্ত হয়েছি। তাছাড়া গোসলের পানিতে অধিক পরিমাণে আয়রন দেখা যায়। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে বেসিনের পানি খাচ্ছে। আমি খাবার পানি বাহির থেকে আনি। এ বিষয়গুলো হল প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের বাঁধন কুমার মহন্ত বলেন, হলের ওয়াইফাই শুধু নামে আছে, কাজে নেই। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঠিকভাবে পরিষ্কারের কাজ করছে না, হলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। এদিকে পত্রিকা ও লাইব্রেরিতে বইয়ের সংকট। বৃষ্টি আসলে রিডিংরুমের মেঝেতে পানি ভর্তি হয়ে যায়। আর আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এটার সুফল দেখছি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রভোস্ট স্যার মাসে বা দুইমাসে মাত্র এক–দুইবার হলে আসেন। শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির মত মৌলিক সমস্যায় তার কোনো মাথাব্যথা নেই। সর্বোপরি দায়িত্ব পালনে তিনি যথেষ্ট অবহেলা করছেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ পাচ্ছি না।
আলাওল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ এনামুল হক বলেন, হলের সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে কিছু কাজ হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, হলের বিস্তারিত সমস্যা আমাদের জানানো হয়নি। তবে পানির ফিল্টারের সমস্যাটি আমাদের অবহিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফিল্টারের জন্য একটি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আশা করি, খুব দ্রুতই এ সমস্যা দূর হবে।