ভোজ্যতেল নিয়ে সারা দেশে সীমাহীন অস্থিরতা চলছে। নিকট অতীতে বাংলাদেশ এতো বড় সংকটে পড়েনি বলে বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়,ঈদকে সামনে রেখে তৈরি হওয়া সংকট ঈদের পরে আরও তীব্র হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের খুচরা বাজারের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জেও সয়াবিন তেলের গভীর সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে এমন তীব্র সংকটের সময় নতুন করে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলেন মিলমালিকেরা। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় লিটারে ৪৪ টাকা। বাড়ানো হয়েছে পাম তেলের দামও। এখানে উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে সীমাহীন অস্থিরতার কারণে গত দুই মাস ধরে সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি কমে আসছিল। আবার ঈদের পর দাম বাড়ানো হচ্ছে–এমন ঘোষণায় বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের সংকট তৈরি হয়। কেননা, দাম বাড়লে তাতে পুরনো দামে কেনা সয়াবিন তেল বাড়তি দামে বিক্রি করার সুযোগ পাবে–এমন আশায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অনেকে তেল গুদামজাত করে রেখেছেন। এই অভিযোগ পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতি। এবার দাম বাড়ানোর কারণে গুদামজাত করে রাখা তেল ধীরে ধীরে বাজারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম সমন্বয় করতে না পারার কারণেই মূলত দেশে ভোজ্যতেল নিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। দেশে দাম পাওয়া যাবে কি না, এমন অনিশ্চয়তায় আমদানিকারকেরা স্বাভাবিক সময়ের মতো ঋণপত্র খোলেননি। ফলে আমদানি কমে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’ অল্প কয়েকদিন আগে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একটা বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তাঁরা বলেছেন, ‘প্রায় দুই বছর যাবৎ করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সীমাহীন আর্থিক দুরবস্থায় নিমজ্জিত। করোনাকালে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে অনেকের। এ রকম পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নতুন করে ভোজ্যতেল বিশেষত সাধারণ মানুষ যে তেল ব্যবহার করে, সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কষ্টকর করে তুলবে।’ বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘পরিসংখ্যান বলছে, করোনা মহামারিকালে বিপুল জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলেও কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। ফলে রাষ্ট্র–সমাজ সর্বত্র বৈষম্য ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষণীয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বাজারব্যবস্থায় সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময়ে মজুত, কৃত্রিম সংকট তৈরি ও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ ভোক্তার কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ ধরনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠলেও এদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকারি সংস্থাগুলো আবারও বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।’ ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি করা হয়।
ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা কৌশল ও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর। কমানো হয়েছে আমদানিতে কর। বাজারেও বাড়ানো হয়েছে পর্যাপ্ত তদারকি। তবু সংকট কমেনি। আমদানির হার দিন দিন কমে যাচ্ছে, সেটা মাথায় রেখে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আমদানি কমে যাওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। আজ দাম বাড়ছে তো কাল কমছে। আবার বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে দেশের বাজারের দামের সমন্বয় নেই। এই দুই কারণে আমদানিকারকেরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। আবার ইন্দোনেশিয়া গত মাস থেকে পাম তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর্জেন্টিনাও রপ্তানি সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় ভোজ্যতেল আমদানির জন্য উৎস দেশও সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে দাম বাড়ানোর পরও আমদানি কতটা বাড়বে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।’
ব্যবসায়ীদের অভয় দিয়ে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, সে জন্য তদারকি দরকার। সমস্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।