অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমর্থন পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কয়েক দিনের মধ্যে দিল্লিতে থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০ দেশের রাষ্ট্রদূত একযোগে তার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন, যা বাংলাদেশে আগে কখনও ঘটেনি। দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সমর্থন পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের সংকটময় সময়ে তারা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর ২৭ রাষ্ট্রদূত একযোগে তার সঙ্গে বৈঠক করতে আসছেন বলে জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের।
ইউনূস বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২০ দেশের ২০ জন রাষ্ট্রদূত দিল্লিতে থাকেন। সাত দেশের সাত রাষ্ট্রদূত ঢাকায় আছেন। দিল্লি থেকে একসঙ্গে ২০ জন রাষ্ট্রদূতসহ মোট ২৭ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সমবেতভাবে আমার সঙ্গে বৈঠক করার জন্য আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকায় আসছেন।
আগে কখনও ইইউএর ২৭ জন রাষ্ট্রদূত একত্রিত হয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি তুলে ধরে ইউনূস বলেন, দিল্লি থেকে এ বিশাল সংখ্যক রাষ্ট্রদূত একসঙ্গে বৈঠক করার জন্য আসছেন না। এবার কাজটি করার পেছনে আছে ইইউর সমর্থন প্রকাশ করা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রাজিল, তুরস্ক, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, লিবিয়াসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত। দ্বিপাক্ষিক নানা সহযোগিতাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশ্বাস তারা দিয়েছেন।
সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য বিশ্ব নেতাদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, আমি যখন সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেই, সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, ইতালি, হল্যান্ড, জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্বের অনেক দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমার বৈঠক করার সুযোগ হয়। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়েছে, যেখানে আমি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলেছি।
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রবাসে বাংলাদেশিদের কাজের ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে দাবি করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করছি। আমার অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাত সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জনসহ অন্যান্য বাংলাদেশিকে মুক্তি দিয়েছে। এসব বাংলাদেশি কারাবাসের ঝুঁকি নিয়ে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদ করেছিল। বাংলাদেশিরা এ রকম প্রতিবাদ আরো অনেক দেশেই করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
প্রবাসীদের কল্যাণে সরকার সম্ভব সবকিছু করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। ১৮ হাজার বাংলাদেশি, যারা সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলার পরও স্বৈরাচারী সরকারের অব্যবস্থাপনার জন্য মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তিনি তাদের জন্য মালয়েশিয়ার দ্বার আবার উন্মুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন।
মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, আসিয়ানের সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের আবেদন সক্রিয়ভাবে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। একই ধরনের আশ্বাস আমরা পেয়েছি ইন্দোনেশিয়া থেকেও। সৌদি আরবসহ বিশ্বের আরো অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। প্রথমবারের মতো ওআইসি সদর দপ্তরে আমরা স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিচ্ছি।
তুরস্কের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়ার কথা তুলে ধরে ইউনূস বলেন, তুরস্কের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সফর করেছে। এদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য টার্কিশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির একটি অফিস ঢাকায় স্থাপনের জন্য ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে তুরস্কের বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে। চলতি মাসে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আরও একটি দল বাংলাদেশে আসছে।