চাপ–হুমুক–ধমকি; আবেদন–নিবেদন–অভিযোগ–অনুযোগ ছাপিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব–মনযোগ আকর্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ায় এক রৈখিক নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র’ এসিড টেস্টে পড়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বের ছোট–ছোট দেশগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তা–নায্যতার প্রশ্নে এসব দেশে গণতন্ত্রকে সুসংহত রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমা মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পূর্ব–পশ্চিম সবার চোখ এখন বাংলাদেশ মুখি। এ থেকে অনুমান করা যায়– সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবেলার কৌশলে বাংলাদেশ কতটুকুন এগিয়ে যাবে তার উপর নির্ভর করছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের গতিপ্রকৃতি। অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার উপর নির্ভর করছে অর্থনৈতিক সুযোগ। সময়ের ব্যবধানে দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থায় মহামন্দা, মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জনে কৌশলগত সম্পর্কের বাইরে চিন্তা করা আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র নবায়ন করা আমাদের সময়ের অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অপরিহার্য।
বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হুমকির মুখে। যুগান্তর বা দশক ধরে প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র একটি দেশের সীমানার ভেতরে– বাইরে সমানতালে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করছে। জনগণের অবিশ্বাস এবং ন্যায়সংগত টেকসই–অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ নতুন– নেতাদের উত্থান ঘটিয়েছে। যারা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুণ্ন করছে। বিশ্বজুড়ে, দুর্বল রাষ্ট্র ক্ষমতা, আইনের ক্ষীণ শাসন, উচ্চ বৈষম্য এবং দুর্নীতি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে চলেছে। এ সুবাদে কর্তৃত্ববাদী–স্বৈরাচারী নেতারা গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরতে সাহস করেছে। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের টার্গেট করে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল তথ্যের কারসাজি করে গণতান্ত্রিক সংহতিকে দুর্বল করার প্রবনতা বাড়িয়ে তুলেছে।
অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে চীন–রাশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নসহ সাম্প্রতিক ব্রিকস জোটের (নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক) তৎপরতা চোখে পড়ার মত। এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান রিজিওন দেশের নেতৃত্বদানকারী চীন ইতোমধ্যে পশ্চিমাদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করেছে। এদিকে প্রাণবন্ত সমৃদ্ধি এবং বৈচিত্র্যকে সাথী করে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই দারুস সালাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামসহ নানা দেশের নতুন বিশ্বের হাতছানি বিশ্বরাজনীতিতে পূর্ব–পশ্চিমের সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার ক্রমাগত দখলদারিত্ব এবং কর্তৃত্ববাদী মনোভাব যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছে। এ পর্যন্ত ইউক্রেনের জন্য চীনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার কোনও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। ফলে রাশিয়ার আজীবন শাসন করার অবস্থানকে আরও দুর্বল করেছে। পশ্চিমের বিরুদ্ধে এক রৈখিক নতুন যুগের শুরু করতে মরিয়া হয়ে উঠছে চীন–রাশিয়া। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনকে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত করার কয়েকদিন পর একটি অত্যন্ত প্রতীকী পদক্ষেপে– হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকরা সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এবং অন্য একজন শীর্ষ রুশ কর্মকর্তার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন – যা ইউক্রেনের যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত আদালতের এ প্রথম সিদ্ধান্ত। ফলে ধেয়ে আসা নতুন বিশ্বব্যবস্থা থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে ।
একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার অংশীদার হওয়ার স্বপ্নযাত্রার দৌড়ে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের আর কতদূর এগিয়ে যেতে হবে–এ প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে সামনে আসছে। সবমিলে কেমন হতে পারে আগামীদিনগুলো; তারজন্য পেছন ফিরে না তাকিয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। সম্প্রতি গণতন্ত্র সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন– আমাদের প্রমাণ করতে হবে গণতন্ত্র এখনও কাজ করে এবং বাস্তব উপায়ে মানুষের জীবন উন্নত করতে পারে। আর এটি করার জন্য গণতন্ত্রীমনাদের এক হতে হবে। মনে রাখতে হবে–উন্নত জীবনের অধিকার আদায়ে আমরা আমাদের সময়ের সবচেয়ে চাপা সংকট মোকাবেলা করতে পারি।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক।