গুরুজনেরা বলেন, সময় থাকতেই সাধন করতে হয়। নইলে সব হারিয়ে বিবাগী হয় হৃদয়। আসলে সব সম্পর্কেরই পরিচর্যা ও যত্ন লাগে। জীবন চলার পথে আপন বলয়ের চারপাশের সবকিছুই প্রেম চায়, চায় মায়ায় মোড়ানো ভালোবাসার ছোঁয়ায় যত্নআত্তি। চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যেই কেটে যায় আস্ত একটা জীবন। এছাড়া কেবল একতরফা পাওয়াতেও বস্তু কিংবা ব্যক্তি স্বার্থান্বেষী হয়ে উঠে। সম্পর্কেরও সুশ্রী হারায়। একতরফা পাওয়াতে হৃদয় প্রেম ও আবেগহীন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে না পাওয়ার অবহেলা মনে ও মগজে অপূর্ণতার বিষ ছড়িয়ে সবীজতার সৌন্দর্যকেও কুৎসিত করে বহমান সময়কে নিস্পৃহ করে তোলে। জীবনটা বিষণ্নতার আঁধারে রঙহীন বিবর্ণতার ধূসরে বিষাদগ্রস্ত হয়ে থমকে থাকে পথচলা। অযত্নের অবজ্ঞায় আস্থার বাহুডোরের আবেগও বদলে যায় প্রেমহীন রুক্ষতার শরীরী কামনায়। নীড়মুখো পাখিটাও তখন পথভোলা হয়ে দিশাহীন যাত্রায় উড়তে উড়তে ক্লান্তিতে ধোঁয়াটে অন্ধকারে একদিন হারিয়ে যায়।
এখনকার সময়ে সুন্দর ও আলোকিত ভবিষ্যত গড়ার অতিমাত্রার চিন্তায় ব্যস্ততার ঘোরদৌড়ের অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতা চলছে আমাদের সমাজ ও সংসারে। যদিও কাব্য করে অনেকেই বলে, ‘যে যাওয়ার সে যাবেই, তাকে শতচেষ্টাতেও আটকানো যায় না।’ এই কথাটি আমি মনপ্রাণে মানতে পারি না। কেন যাবে? যেতে দিলেই তো যাবে? চলে যেতে যাওয়ার কথাটি মনে আসার আগেই আপনি তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করতে পারেন। কাঙ্ক্ষিত প্রেম ভালোবাসা না পেলে কিংবা সঠিক পরিচর্যা ও যতন না করলে হয়তো চলেই যাবে। আমি মনে করি যত্নে আগলে রাখলে পথের বুনোফুল কিংবা কচুরিপানার ফুলও শৌখিন সৌন্দর্যে হাসে। বাজার থেকে কিনে আনা কলমিলতা কিংবা পুঁইশাকের অব্যবহৃত ডাটাগুলোও যদি কাঁচের গ্রাসে পানি দিয়ে যত্ন করে সাইট টেবিলে হালকা আলো বাতাসে রাখা হয়। তবে তারাও দু‘চারদিন পর থেকেই ড্রয়িংরুমের ইনডোর প্ল্যান্টের সৌন্দর্যকেও হার মানায়। অযত্নে ফেলে দেয়া অব্যবহৃত অনেক জিনিসকে নিজের ভেতরের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগালে তা শোপিসে রূপান্তরিত হতে বাধ্য। বাগানের টবের গাছগুলোতে অলসতায় কয়েকদিন পানি না দিয়ে নিজেই দেখুন না, পাতার মলিনতায় কেমন করে ফুল ফোটা বন্ধ করে দেয়। একটি গাছ শুধু পানিতেই তুষ্ট হয় না, সাথে জৈবিক সার দিয়ে মাঝেমধ্যে টবের মাটিতে নিড়ানিও দিতে হয়। নইলে তাতে ফুল ফুটতে বন্ধ হবে, ডালপালা সরু হয়ে পাতারাও একসময় শুকিয়ে ঝরেই যাবে।
গাছ, বস্তু কিংবা সম্পর্ক সে যা–ই হোক। সবকিছুরই সঠিক সময়ে সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। সময় হারিয়ে যত্নআত্তি করেও তখন আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। সঠিক সময়ে যখন আপনার একঘণ্টার উপস্থিতি আপনার নিজের ঘরের সম্পর্ক কিংবা পরিবেশ প্রকৃতিও আপনাকে দ্বিগুণ প্রেম ও মায়ার সৌন্দর্যের সজীবতায় আলিঙ্গন করবে, সেই সম্পর্ক কিংবা পরিবেশ প্রকৃতি অবেলায় চারঘণ্টা সময় ব্যয়েও আপনাকে তা থেকে বঞ্চিত ও নিরাশ করবে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে বর্তমানকে যত্নে আঁকড়ে ধরে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অতিমাত্রায় ভবিষ্যতের চিন্তায় অধিক ব্যস্ততায় বর্তমানকে অবহেলা করলে তখন বর্তমানই বিষাক্ত হয়ে যায়।