সমমনা প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে বাধা দেয়ার অভিযোগ

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসো. নির্বাচন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে বাধা এবং দফায় দফায় হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। গত দুইদিন ধরে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হলেও সমমনা পরিষদের কাউকে ফরম নিতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে নির্বাচনী তফশিল বাতিল করে নতুন তফশিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে তারা। আজ (বৃহস্পতিবার) মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময়সীমা রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের নির্বাচনের দিনক্ষণসহ সিডিউল ঘোষণা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের দিনক্ষণ নির্ধারিত রয়েছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় যেকোনো প্রার্থী ১৫ হাজার টাকা ফি প্রদান করে হালনাগাদ ভোটার তালিকাসহ ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ রয়েছে। সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের প্রায় ২ হাজার ৪৫০ জন ভোটার রয়েছে।

অভিযোগ করা হয়েছে, গত মঙ্গলবার নির্ধারিত দিনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে প্রার্থীদের বাধা দেয়া হয়। সিএন্ডএফ এজেন্টদের একটি অংশ তাদের লোকজন নিয়ে আগ্রাবাদ সিএন্ডএফ টাওয়ারের সামনে জড়ো হয়ে প্রার্থীদের ফরম সংগ্রহ করতে ভিতরে যেতে বাধা দেন। এর কিছু ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গতকালও প্রার্থীদের বাধা দেয়া হয়। আজ ফরম সংগ্রহ করার শেষ দিনেও প্রার্থীদের অনেকেই ফরম সংগ্রহ করতে যাবেন। তবে তারা ফরম নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

সমমনা পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষে প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন, এম এ সাত্তার, এস এম চৌধুরী রাজু, মো. আবুল হাসেম, সিরাজউদ্দিন আহম্মেদ, মিচ্ছু সাহা, আবদুল গণি, উৎপল রক্ষিত ও বদিউজ্জমান খান এক যুক্ত বিবৃতিতে এই ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী নব বাংলাদেশের অভ্যুদয়কালে সদস্যদের ভোটে ও আস্থায় পুনঃপুনঃ বিজয়ী সমমনা পরিষদকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেয়ার মধ্য দিয়ে এসোসিয়েশনের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। এসোসিয়েশনের ৫০ বছরের ইতিহাসে ধারাবহিক সুষ্ঠু নির্বাচনে এর আগে এই ধরনের ঘটনার কোনো নজির নেই বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সমমনা পরিষদের নেতৃবৃন্দ সকল প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ব্যাপারটি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা নির্বাচনী তফশিল বাতিল করে পুনরায় তফশিল ঘোষণারও দাবি জানান।

গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শরিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগে মনোনয়ন সংগ্রহের তারিখ ছিল ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি। দুইদিন পিছিয়ে তা আবার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ঠিক সময়ে অন্য সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) পর্যন্ত ২৯টি পদের বিপরীতে ৬৯টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা পুলিশসহ যৌথ বাহিনীর লোকজনকে নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করেছি। আমরা অফিসে থাকি। বাইরে কি হচ্ছে সেটা জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের কাছে যারা আসছেন তাদেরকেই আমরা মনোনয়ন ফরম দিচ্ছি। আজও যারা আসবেন তাদেরকে মনোনয়ন ফরম দেব।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, সিএন্ডএফ টাওয়ারের নিচে শ’ দুয়েক লোক জটলা পাকিয়ে সারাক্ষণই থাকেন। তারা সমমনা পরিষদের প্রার্থীদের উপরে উঠতে বাধা দিচ্ছেন। ফরম যারা নিচ্ছেন সব তাদেরই লোক। ফরম নিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথেই ফরমগুলো নিয়ে নেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত দিনেই কেবলমাত্র ২৯ জন প্রার্থীই যাতে থাকে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শরিফ এসব ব্যাপারে অবগত নন বলে দৈনিক আজাদীকে জানান।

গতকাল সিএন্ডএফ টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেয়া কয়েকজন সিঅ্যান্ডএফ নেতা দৈনিক আজাদীকে বলেন, পলাতক আওয়ামী দোসরদের নির্বাচনের সুযোগ করে দিতে চেয়েছিল কমিশন। কিন্তু প্রার্থীদের বাধার মুখে তারা পারেননি। আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসরদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেব না। তারা বলেন, এই দাবি কারো একক দাবি নয়, এটা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসদের সর্বজনীন দাবি। পলাতক আওয়ামী দোসর ছাড়া যে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন বলেও তারা উল্লেখ করেন। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে সিঅ্যান্ডএফ টাওয়ারের সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করছেন বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, আমরা মনে করি ফ্যাসিস্টদের প্রতিরোধ করে একটি সর্বজনীন এবং উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সমমনা পরিষদের নেতা কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, আমরা কেউ মনোনয়ন ফরম নিতে পারিনি। আমাদের দুয়েকজন লোক আজ সকালে মনোনয়ন ফরম নিতে গিয়েছিলেন। তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তিক সংগঠন বা নেতৃত্বে ছিল না। এটা সবসময়ই সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষার একটি সংগঠন। এখানে আওয়ামী লীগমনা যেমন নেতৃত্বে ছিলেন তেমনি একই কমিটিতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী মনা নেতাও ছিলেন। আমরা কখনো রাজনীতিকে ব্যবসায়িক স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিইনি। তিনি বলেন, আমি তো কোনোদিন আওয়ামী লীগ করিনি। আমার কমিটিতে আকতার সাহেব ছিলেন, এডভোকেট ওমর ফারুক সাহেব ছিলেন। তারা তো বিএনপি করেন। একটি বিশেষ গোষ্ঠী পুরো সংগঠনটিকে কুক্ষিগত করতে চাচ্ছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিএমপিকে দুইটি পিকআপ দিল বেপজিয়া
পরবর্তী নিবন্ধফুলকির সুবর্ণজয়ন্তী বছরের প্রথম আয়োজন