সমবায় সমিতির নারী কর্মীর আত্মহত্যা নিয়ে যা জানা গেল

বোয়ালখালী প্রতিনিধি | সোমবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বোয়ালখালীতে একটি সমবায় সমিতির এক নারী কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। গত ৪ জানুয়ারি বিকেলে উপজেলার শ্রীপুরখরণদ্বীপ ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ড পাল পাড়ার জুনি পালের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। শুক্লা দে (৩৮) নামে ওই নারী রান্না ঘরের চালার ডাসার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান তাঁর স্বামী সিদুল পাল। শুক্লা দে রূপসা সার্ভিস গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির বোয়ালখালী শাখায় ফিল্ড অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন। তাঁর এক মেয়ে রক্তিমা পাল হাওলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও এক ছেলে ঋক্তিক পাল অনার্সে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন।

তাঁর স্বামী সিদুল পাল বলেন, শুক্লা সংস্থাটির কানুনগোপাড়া শাখায় ২০২৩ সালের মে মাস থেকে ফিল্ড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। ওই সংস্থা এলাকায় মানুষজনকে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়। এসব ঋণ কিস্তি আকারে আদায় করতেন শুক্লা। চাকরিরত অবস্থায় শুক্লার সাথে গ্রাহকের আর্থিক লেনদেনের বিরোধ হলে শুক্লা তাঁর বেতন থেকে পরিশোধ করবেন বলে জানান এবং গত নভেম্বর মাসে বেতন থেকে ৬ হাজার টাকা কর্তনও করেন। এরপরেও সংস্থার কানুনগোপাড়া শাখার ম্যানেজার কাঞ্চন দেবনাথ শুক্লাকে অপমান করতে থাকেন প্রতিনিয়ত। পরবর্তীতে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট এলাকায় বদলি করেন শুক্লাকে। সেখানেও কাঞ্চন দেবনাথের প্ররোচনায় নন্দন, চিনু বিশ্বাস ও পলাশ নাথ দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা বলে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন। শুক্লা এ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন বলে দাবি করেন স্বামী সিদুল পাল।

এদিকে শুক্লার স্বামীর অভিযোগ অস্বীকার করে নন্দন দে ও চিনু বিশ্বাস বলেন, শুক্লা গত দেড় বছর ধরে আমাদের সংস্থায় কাজ করছেন। গ্রাহক থেকে কিস্তির নির্দিষ্ট টাকার চেয়ে বাড়তি ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা দফায় দফায় নিয়েছেন কিন্তু সে বাড়তি টাকাটা খাতায় না তুলে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেছেন। এ নিয়ে গত তিনমাস আগে তাঁর সাথে গ্রাহকদের একটি বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হক উভয় পক্ষের মাধ্যমে মীমাংসা করে দেন। ৪ লাখ ৮ হাজার টাকার মধ্যে ২ লাখ ৪ হাজার টাকা গ্রাহক সমিতিতে চালাবে বাকি ২ লাখ ৪ হাজার টাকা শুক্লা সমিতিকে দিবেন। কিন্তু শুক্লা এক সাথে দিতে না পারায় সমিতির কর্মকর্তাদের সম্মতিতে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তিনি সমিতিতে দিবেন। গ্রাহকদের সাথে একটি মতবিরোধ হওয়ায় তিনি নিজেই পটিয়া ধলঘাট শাখায় যোগদান করেন। তাঁকে কেউ মানসিক নির্যাতন করা করেনি এবং বেতন থেকে টাকাও কেটে রাখা হয়নি। তার ১৫ হাজার টাকা বেতন ছিল। চিনু বিশ্বাস বলেন, আমার ধারণা স্বামীর কারণে শুক্লা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর স্বামীকে ধরলে সব সত্যটা বের হয়ে আসবে।

শ্রীপুরখরণদ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, গত কয়েক মাস আগে শুক্লা দেএর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আমার কাছে আসে। তিনি গ্রাহকদের থেকে বাড়তি টাকা নিতেন এবং গ্রাহকদের স্বাক্ষর জাল করে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলন করতেন, যার প্রমাণও মিলেছে। পরবর্তীতে গ্রাহক ও শুক্লার উপস্থিতিতে টাকাগুলোকে দুইভাগ করে এক ভাগ গ্রাহক বহন করবে অন্য ভাগ শুক্লা বহন করার কথা বলা হয়। এতে সকলে সম্মতি দেন। কিন্তু আমি শুনেছি শুক্লাকে কানুনগোপাড়া শাখার ম্যানেজার সে টাকাগুলো দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। শুক্লা টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় হয়ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

এদিকে সংস্থার কানুনগোপাড়া শাখার ম্যানেজার কাঞ্চন দেবনাথ ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা জুনু পাল বলেন, সম্ভবত টাকা আদায় করতে না পারার কারণে অথবা অফিসে এ টাকার জন্য অপমান করার কারণে সে আত্মহত্যা করেছে।

এদিকে খবর পেয়ে শনিবার রাতে থানা পুলিশ তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল রবিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মরদেহ পাঠানো হয়েছে। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাড়িতে এনে তাঁকে দাহ করা হয়।

বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুক্লার স্বামী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদার লন্ডনযাত্রা কাল
পরবর্তী নিবন্ধপার্বত্য তিন জেলায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পদক্ষেপের নির্দেশ