শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলার একাডেমি দেশের ৬টি জেলায় রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশে প্রথম বারের মত বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপনে সার্বজনীন ‘সাংস্কৃতিক উৎসব’ আয়োজন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের সিআরবি শিরীষতলায় আয়োজিত আলোচনা সভা ও সার্বজনীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন। আলোচনা সভায় জেলা কালচারাল অফিসার সৈয়দ আয়াজ মাবুদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব ভদন্ত ড. সংঘপ্রিয় মহাথের এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রতিনিধি সামিরা আহমেদ। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বলেন, সমপ্রীতির বন্ধনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকল সামপ্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে দেশপ্রেমের ভিত্তিতে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভদন্ত ড. সংঘপ্রিয় মহাথের বলেন বুদ্ধের দেখানো মতাদর্শী অনুযায়ী আমাদেরকে সাম্য, শান্তি এবং ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে ত্যাগের মহিমায় বলবান হতে হবে।
আলোচনা সভা শেষান্তে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের শিল্পীদের পরিবেশনায় সমবেত কন্ঠে মানবতাবাদী সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর নৃত্য প্রশিক্ষক সোমা বড়ুয়া প্রবন্তী ও নৃত্য প্রশিক্ষক অনন্য বড়ুয়ার পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য দল। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী জয়া বড়ুয়া এবং সুমন বড়ূয়া। এরপর মঞ্চ মাতিয়ে তুলে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ম্যাট্রিক্যাল ব্যান্ড এবং সবশেষে জনপ্রিয় গানে দর্শকশ্রোতাদের মাতিয়ে তুলেন বাংলা গানের যুবরাজ খ্যাত বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী আসিফ আকবর।
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি : প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির হাজারী লেইনস্থ ভবনে ইউনিভার্সিটির বৌদ্ধ মন্দিরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন করা হয়েছে। দুদিনব্যাপী এই উৎসব উদযাপন করা হয়। গতকাল রবিবার সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এস. এম. নছরুল কদির। বিশেষ অতিথি ছিলেন রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইফতেখার মনির। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক এস. এম. নছরুল কদির বলেন, পৃথিবী আজ অশান্ত। আজ তার চারিদিকে যুদ্ধ–বিগ্রহ। এই অশান্ত পৃথিবীতে গভীর শান্তি প্রয়োজন। গৌতম বুদ্ধ সারাজীবন এই শান্তির কথাই বলে গেছেন। তিনি চেয়েছেন, পৃথিবীতে শান্তি বয়ে আসুক, কল্যাণ বয়ে আসুক, আসুক সম্প্রীতি। পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক। তিনি শান্তির পাশাপাশি অহিংসার কথাও বলে গেছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইফতেখার মনির বলেন, গৌতম বুদ্ধ যে–শান্তির কথা বলে গেছেন, আমরা এই ইউনিভার্সিটিতে সেই শান্তির ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। উপাচার্য অধ্যাপক এস. এম. নছরুল কদির অনুষ্ঠানে বেলুন উড়ান ও বিশ্বশান্তি কামনায় কবুতর অবমুক্ত করেন। আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিল্লোল সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান টুটন চন্দ্র মল্লিক, সহকারী প্রক্টর অনুপ কুমার বিশ্বাস ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা।
বান্দরবান : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে বান্দরবানে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার, কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার, করুনাপুর বৌদ্ধ বিহারসহ জেলার বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার গুলোতে দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় কর্মসূচির মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা পালন করছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। পূজার্চনার পর দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে সকালে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা শহরে শোভাযাত্রা বের করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বান্দরবানের বোমাং সার্কেল চীফ রাজা ইঞ্জিনিয়ার উচপ্রু, রাজপুত্র বনি মারমা প্রমুখ। এছাড়াও মঙ্গল ও শান্তি কামনায় কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার এলাকায় বোধিবৃক্ষে চন্দনজল ছিটানো হয়। বুদ্ধ ভাষিত সূত্রপাঠ, পঞ্চশীল গ্রহণ, বুদ্ধ পূজা, সীবলী পূজা, পিণ্ডদান, কল্পতরুদান অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে বালাঘাটা বিহার অনুষ্ঠানে ধর্মীয় দেশনা প্রদানকালে পার্বত্য বৌদ্ধভিক্ষু পরিষদের মহাসচিব ও বালাঘাটা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত উ তেরেজা মহাথের বলেন, বুদ্ধ কাউকে মুক্তি দিতে পারেননা, মুক্তি অর্জন করতে হয় নিজেকেই। সকল প্রাণীর প্রতি দয়া, করুণা, মৈত্রী ও উপেক্ষার আচরণ করতে হবে। সত্যপথে চলার মধ্যেই নিহিত রয়েছে মুক্তি। সকলকে পঞ্চশীল পালন করার আহবান করেন ভিক্ষু। এসময় অনুষ্ঠানে পূজনীয় ভিক্ষু সংঘসহ বিপুল সংখ্যক দায়ক–দায়িকা উপস্থিত ছিলেন।