সমকালের দর্পণ

রাজনৈতিক অঙ্গনে অশনি সংকেত

মেজর মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম (অব.) | রবিবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এদিন ছিল বৃহস্পতিবার। পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর পুরানা পল্টন এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি’র উপর আততায়ীরা গুলি বর্ষণ করে। চিকিৎসার্থে শরীফ ওসমান হাদি’ কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজএবার কেয়ার হাসপাতাল হয়ে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর শরীফ ওসমান হাদি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ বিষয়টি রাজনৈতিক সচেতন মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের পাশাপাশি নানা ধরনের শঙ্কাও সৃষ্টি করে। ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে শরীফ ওসমান হাদি’র মরদেহ ঢাকা বিমান বন্দরে এসে পৌঁছায়। এই রাতেই আমরা সচেতন মহলের সেই শঙ্কার বাস্তব পরিণতি লাভ করতে দেখি। এ রাতে দৈনিক প্রথম আলো, দি ডেইলী স্টার, ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার, ছায়ানট, উদীচী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে অগ্নি সংযোগ এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেঃ জেঃ জাহাঙ্গীর, শরীফ ওসমান হাদি’র আততায়ীদের আটক করতে সহায়তার জন্য ৫০,০০০০০ (পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। দৈনিক প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী অপরাধীরা ওসমান হাদি’কে গুলি করার ১২ ঘন্টার মধ্যে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট হয়ে সীমান্তের ওপারে পাড়ি জমায়। এই পাড়ি জমানোয় সহায়তাকারী ফিলিপ স্যান্নাল এবং সঞ্জয় চিসিমকে পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এর মাঝে পুলিশ তাদের অবস্থান থেকে জানিয়েছেন হন্তারকদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তারা নিশ্চিত নয়।

ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি সনাক্ত করে মোহাম্মদপুর থেকে তার মালিক আবদুল হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়। আবদুল হান্নানের ভাষ্য, সে মোটর সাইকেলটি এক বছর আগেই বিক্রি করে দিয়েছে।

এসব ঘটনার বাইরে পুলিশ আততায়ী ফয়সাল করিম (পুলিশের ভাষ্য ইনি হাদিকে গুলি করেছেন), আলমগীর শেখ, (মোটর সাইকেল চালক) এবং রুবেল (হাদিকে ঐদিন সার্বক্ষণিক অনুসরণ করেছেন), এদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশ ফয়সাল করিম’এর শ্যালক এবং স্ত্রীকে ব্যাংকের বেশ কিছু স্বাক্ষরকৃত খালি চেক সহ আটক করেছে।

শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করার পরপরই কয়েকটি র্স্পশকাতর জিনিস গণমাধ্যমের সুবাদে জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়। সেসব জিনিস দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আশঙ্কা বা শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। যেমন অভিযুক্ত ফয়সাল করিম’ ইতিপূর্বে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি তিন মাসের মাথায় জেল থেকে ছাড়া পান।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান ১৩ নভেম্বর ২০২৫ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখায় উল্লেখ করেছেন “আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ গ্রেফতার হয়েছেন, বা গ্রেফতারের মুখে আছেন। প্রমাণিত কোন সত্য তথ্যের ভিত্তি ছাড়াই অনেককেই হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এমন কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি যা প্রকৃত অপরাধের মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ বা সম্পর্কের কারণে করা মামলা থেকে আলাদা করতে পারে”। তিনি আরো উল্লেখ করেন “যারা আশা করেছিলেন আওয়ামী লীগের পতন বাংলাদেশে মানবাধিকার ও জবাবদিহির জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে, তাদের কাছে বাস্তবতা একেবারেই হতাশাজনক”।

এই যখন বাস্তবতা তখন ফয়সাল করিম’ কার প্রবল প্রতাপে দ্রুততম সময়ে জেল থেকে ছাড়া পেলেন এবং তিনি কিভাবে শরীফ ওসমান হাদির ঘনিষ্ঠ জন হয়ে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছিলেন।

এটিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য। সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিরাপত্তায় তাদেরকে আগ্নেয় অস্ত্র প্রদান করবেন। শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করার পর আসন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন দলের আগ্রহী প্রার্থী এবং সাধারণের মাঝে প্রার্থীদের নিরাপত্তার ঝুঁকি প্রশ্নটি আলোচিত হতে থাকে। এ বিষয়টি হয়ত বিবেচনায় নিয়ে সরকার তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে আসে প্রার্থীদের নিরাপত্তায় ব্যক্তিগত অস্ত্র প্রদানের। এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি বাস্তবে কার্যকর করার আগে সরকারকে এটি গভীরভাবে চিন্তাভানার মাধ্যমে গ্রহণ করা উচিত। আখেরে ব্যক্তিগত অস্ত্র বুমেরাং হতে পারে। নির্বাচনে প্রার্থীরা পরস্পর পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। একে অপরের উপর প্রভাব তথা আধিপত্য বিস্তারে ব্রতী হবেন এটি অস্বাভাবিক নয়। এটি করতে গিয়ে কোনও কারণে একপক্ষ অস্ত্র ব্যবহার করলে অপর পক্ষ প্রতি উত্তর দেওয়ায় উদ্যত হলে তখনই হবে লঙ্কাকাণ্ড। আর এখনও নানা আড়ালে আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে যেসব অবৈধ অস্ত্রধারীরা আছে তারাও তখন বেসামাল হওয়ার অবকাশ পেয়ে যাবে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নানা দোটানায় পড়ে “সুট আই টেইক এ্যাকশান অর নট, ইফ আই টেইক এ্যাকশান দ্যান হোয়াট উইল হ্যাপেন এন্ড ইফ আই ডু নট টেইক এ্যাকশান দ্যান হোয়াট উইল হ্যাপেন” আমি কি কোনও পদক্ষেপ নিব, নিলে কী পরিণতি হতে পারে, আমি পদক্ষেপ না নিলে কী হতে পারে, এইভাবে পদক্ষেপ নিব না নিব না এই গড়িমসি নামক চোরাবালিতে আটকে যেতে পারে।

তৃতীয়ত প্রশ্ন আসবে নির্বাচনী প্রার্থী হয়ে অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনকারী সবাই কি অস্ত্র চালনায় পারদর্শী? উত্তর না বোধক হলে এদের অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ দেবে কে? প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হল। ধরে নিলাম আমাদের মেধাবী প্রার্থীরা দ্রুততম সময়ে অস্ত্র চালনায় দক্ষতা অর্জন করে ফেলবেন বা করবেন। অতপর অস্ত্র পরিচালনায় পারদর্শী প্রার্থীরা কি নির্বাচনী প্রচারণায় বেশি মনোযোগী হবেন না কি কখন কার দিকে অস্ত্র তাক করতে হবে সেদিকে মনোযোগী হবেন?

চতুর্থত, এমন অবস্থায় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাই বা কী হবে। তারা কি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন?

পঞ্চমত সংকট ঘনীভূত হবে যখন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে সরকার থেকে পাওয়া অস্ত্র বলে গোলাগুলি শুরু হলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন কোন দিকে তাদের অস্ত্র তাক করবেন, তখন ত আর কার দোষ বা কে নির্দোষ সে বিচার করার সময় থাকবে না। এমতাবস্থায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা আর প্রার্থী বাঁচানোই তখন ত মুশকিল হয়ে পড়বে!

ময়মনসিংহের দীপু দাস। উচ্ছৃঙ্খল একদল মানুষের হাতে নিহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ। অভিযোগ থাকলে তার তদন্ত হবে, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে বিচার হবে। বিচারে বিচারক যে শাস্তি দেবেন দোষীকে সে শাস্তি ভোগ করতে হবে। কিন্ত্তু এখানে উচ্ছৃঙ্খল জনতাই বিচারের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান এবং ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দীপু দাসের ঘটনাটি আইনের দৃষ্টিতে যেমন অপরাধ তেমনি পবিত্র ধর্ম ইসলামও কখনো এধরনের উগ্র বেআইনী আচরণকে প্রশ্রয় দেয় না। পবিত্র কোরানের সুরা আলমায়েদা’র আয়াত ৩২ এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ‘যে ব্যক্তি একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল, যে ব্যক্তি একজন মানুষকে অন্যায় হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা করল সে যেন সমস্ত মানবতাকে রক্ষা করল’। পবিত্র এ আয়াত থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হল মানব জীবনের মূল্য অসীম। একজন মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া শুধু একটি ব্যক্তির অপরাধ নয়, এটি মানবতা, ন্যায়বোধ এবং সামাজিক শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে চরম আঘাতও বটে।

জেরুজালেম বিজয়ী সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবী। ক্রুসেডের বিজয়ী বীর। জেরুজালেম বিজয়ী। তখন তার প্রবল প্রতিপক্ষ জেরুজালেমের শাসক ক্রিস্টান রাজা বলদুইন। সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবী তার গোয়েন্দা মারফত খবর পেলেন রাজা বলদুইন দুরারোগ্য কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত। জেরুজালেমে তেমন কোনও চিকিৎসক ছিল না যিনি রাজা বলদুইনকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন। দামেস্কের বিখ্যাত চিকিৎসক লতিফ ছিলেন এসব দুরারোগ্য রোগের তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এ বিষয়টি জেরুজালেমের চিকিৎসক মহলও জানতেন এবং রাজা বলদুইনও। কিন্ত্তু দুটি যুদ্ধরত এবং প্রতিপক্ষ শক্রুর কাছে বলদুইনের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাওয়াই বা কী করে! সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবী ছিলেন এক মহৎ প্রাণ। যুদ্ধের ময়দানে যেমন অজেয় তেমনি মানবিক গুণে ইসলামের মহৎ গুণাবলীর ফল্গুধারায় স্নাত এক অনন্য সাধারণ শাসক। তিনি সমস্ত ক্রিস্টান জগৎকে হত চকিত করে দামেস্কের সেই বিখ্যাত চিকিৎসক লতিফকে রাজা বলদুইন’এর চিকিৎসায় প্রেরণ করেন। উল্লেখ্য লতিফের চিকিৎসায় রাজা বলদুইন ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠেন এবং সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবী’র বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে পরস্পর মুখামুখি হন। এ ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে যেমন তার অন্তর্নিহিত শক্তিকে উদ্ভাসিত করেছে তেমনি পৃথিবীর ইতিহাসেও এক মুসলিম শাসকের মহত্তম চেতনার উদাহরণ হয়ে আছে। এ ঘটনা এমনকি ক্রুসেডের ইতিহাসকেও চাপিয়ে মানুষের প্রতি মানুষের মানবতাবোধের বিরল নজীর হিসাবে যুগে যুগে আলোচিত হয়ে এসেছে। বলা বাহুল্য সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবী’র সেই পদক্ষেপ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে ঔজ্জ্বল্য দিয়েছে, ইসলাম তার স্ব মহিমায় বিস্তার লাভ করেছে।

সাম্প্রতিকের শরীফ ওসমান হাদি’র হত্যাকাণ্ড, দৈনিক প্রথম আলো, দি ডেইলী স্টার, ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার, ছায়ানট, উদীচী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে অগ্নি সংযোগ এবং ভাঙচুরের ঘটনা, দি নিউ এ্যাজ পত্রিকার সম্পাদক জনাব নুরুল কবীরকে হেনস্থা করা, সাংবাদিক আনীস আলমগীরের গ্রেফতার হওয়া, ময়মনসিংহের দীপু দাসকে পুড়িয়ে মারা ইত্যাদি আমাদের গঠনমূলক তথা ইতিবাচক কোনও র্বাতা দেয়নি। এসব ঘটনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনও ভালো বার্তা বয়ে নিয়ে যায়নি। বরং জাতি হিসাবে আমাদের উগ্র আচরণ, অসহিঞ্চু মনোভাবের প্রতিফলনই বিধৃত করেছে।

আমাদের এ জাতি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রম্মপুত্র, তিস্তা, কর্ণফুলি, কুশিয়ারার দুকূল ঘিরে গড়ে উঠেছেবিস্তার লাভ করেছে। এই সব নদীর কূলে কূলে কঠোর কঠিন পরিশ্রমী মানুষেরা যেমন শত প্রতিকূলতায় নিজেদের বসতি গড়েছেন তেমনি এ জনপদকে ঘিরে আউল বাউল, সুফি দরবেশরা অনন্তের আধ্যাত্ম্যের আবহ সৃষ্টি করেছেন পাশাপাশি সাধু সন্ত্ত, বৈষ্ণবরাও একতারার সুরে স্রষ্টার গুণ কীর্তনে মগ্ন থেকেছেন। আদি থেকে আজ পর্যন্ত বহমান জাতির এ অমিয় ধারার গতিরোধের যে কোন উদ্যোগ আমাদের খণ্ডিত করবে দুর্বল করবে, এ উদ্যোগ আমাদের জন্য শুভ কিছু বয়ে আনবে না। এ ধরনের কোনও উদ্যোগ হবে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, কর্ণফুলি, কুশিয়ারার স্বাভাবিক প্রবহমানতার গতিরোধ করার মত এক অসম্ভব অবাস্তব প্রচেষ্টা।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট; সামরিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে ৩টি এস্কেভেটর জব্দ