সভা করতেই পার সাড়ে ৪৪ মাস

খাল মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স ।। আজ দ্বিতীয় সভা হওয়ার কথা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩০ মে, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

নগরের খালসমূহের দুই পাড় থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা ও মনিটরিংয়ে ২০১৭ সালে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। চার ধরনের কাজ করার এখতিয়ার আছে টাস্কফোর্সের। সেইসব কাজ তো দূরের কথা, গত তিন বছর আট মাস ১৫ দিন বা সাড়ে ৪৪ মাসে টাস্কফোর্সের কোনো সভা হয়নি। অথচ প্রতি মাসে একটি সভা করার বাধ্যবাধকতা আছে। ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্সের প্রথম ও সর্বশেষ সভা হয়েছিল।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০টি সরকারি সেবা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এ টাস্কফোর্সের কর্তৃত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উপর ন্যস্ত। কারণ সিটি মেয়র টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ও একই সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন সদস্য সচিব। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর সদস্য হিসেবে আছেন। কাজেই টাস্কফোর্সের সভা আহ্বান থেকে শুরু করে এখতিয়ারাধীন কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে চসিক। কিন্তু সেই জায়গায় সভা না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন সচেতন মহল। অবশ্য আজ রোববার সকালে টাইগারপাস অস্থায়ী নগর ভবনে টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট প্রথমে ১০ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এতে চসিক মেয়র, কাউন্সিলর ও প্রধান নির্বাহী ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন সিটি মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে উপানুষ্ঠানিক পত্র দিয়ে কাজের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকেও টাস্কফোর্সে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করেন। এর প্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ অক্টোবর এই দুই সেবা সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটির আকার ১২ সদস্যে উন্নীত করে মন্ত্রণালয়।
এদিকে টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় সাতটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলে টাস্কফোর্সের কাজও থমকে যায়। অবশ্য সিডিএর ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খালকে ঘিরে কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির আওতায় তিন হাজার ১৫৫টি স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়। তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রণীত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী নগরের মোট ৫৭টি খাল রয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৬৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ সিডিএর মেগা প্রকল্পভুক্ত ৩৬ খালের বাইরেও ২১টি খাল আছে। ফলে এসব খালকে ঘিরে হলেও টাস্কফোর্সের কার্যক্রম বহাল রাখা জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় পর চসিকের বর্তমান মেয়র টাস্কফোর্সের সভা করার উদ্যোগ নেন। এর প্রেক্ষিতে আজ সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, বর্ষা তো এসেই গেল। ঈদের দিন অল্প বৃষ্টিতেই পানি ওঠে গেছে। জলজট হয়। সামনে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। তাই শহরকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে সবার সমন্বয় দরকার। সবার মতামত দরকার। মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে টাস্কফোর্সের সভা আহ্বান করেছি। মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করে দিয়েছে। তাই এটাকে অ্যাক্টিভ করা দরকার।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ মেগা প্রকল্পের কাজ করছে। বিভিন্ন খাল-নালায় কাজ করার সময় তারা বাঁধ দিয়ে রেখেছে। এতে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কারণেই পানি জমে যাচ্ছে। মানুষ সিটি কর্পোরেশনকেই দোষারোপ করছে। অথচ বাঁধগুলো অপসারণে আমরা সিডিএকে বারবার বলে আসছি।
এদিকে টাস্কফোর্সের কার্যাবলী সম্পর্কে জানা গেছে, চারটি কাজ নির্ধারণ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রথম কাজ হচ্ছে, নগরীর প্রাকৃতিক খালসমূহ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, খালের দুই পাড়ে বেদখলকৃত সরকারি জায়গা উদ্ধার, খাল থেকে মাটি উত্তোলন, খালসমূহ খনন এবং ভরাটকৃত খালের মাটি ও আবর্জনা নিষ্কাশন করে খালের স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়ত, খালসমূহের অবৈধ দখলে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং উদ্ধারকৃত জায়গায় পুনরায় যাতে অবৈধ স্থাপনা নির্মিত না হয় সে লক্ষ্যে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা এবং খালসমূহের উভয় পাড়ে উন্নয়নে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ। তৃতীয়ত, খালসমূহের উন্নয়নে খালের উভয় পাশে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা। চতুর্থ কার্যক্রম হিসেবে বলা হয়, টাস্কফোর্স প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি সভার আয়োজন করবে এবং সভার বিবরণী স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রস্তুত বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকাদের মির্জা-বাদল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৬