ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ব্যবসায়ীদের উপর্যুপরি দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিসহ ২৪ জন পরিচালক। ইতোপূর্বে দফায় দফায় সিনিয়র সহসভাপতি, সহ সভাপতি এবং কয়েকজন পরিচালক পদত্যাগ করেন। গতকাল সোমবার সব পরিচালকের পদত্যাগের পর সভাপতি ওমর হাজ্জাজ পদত্যাগ করে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের ডিটিও’র কাছে চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
সভাপতিসহ ২৪ পরিচালকের পদত্যাগের পর গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরীর কাছে চিঠি দিয়ে প্রশাসক নিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়। ওই চিঠির সাথেই চেম্বার সভাপতির পদত্যাগপত্র সংযুক্ত করে মেইল করা হয়।
চেম্বারের সচিব প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডিয়াম এবং পরিচালকদের সকলেই পদত্যাগ করেছেন। এতে করে চেম্বারে মূলত আর কেউ নেই। এই অবস্থায় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যাতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এখন ডিটিও থেকে প্রশাসক নিয়োগ কিংবা অন্য কোনো ডিসিশান আসলে সেই অনুযায়ী চেম্বারের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
গতকাল ডিটিও বরাবরে প্রেরিত পত্রে বলা হয় যে, চট্টগ্রাম চেম্বার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি বাণিজ্য সংগঠন, যা বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, চেম্বারের সংঘবিধি ও সংঘস্মারক অনুসারে পরিচালিত হয়। ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট এ চেম্বারের ২৪ জন পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৮ আগস্ট দুই বছর মেয়াদি বোর্ড গঠিত হয়। ৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব হস্তান্তর করে এর আগের পরিচালনা পর্ষদ।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো এ চেম্বারকে ঘিরে ‘চট্টগ্রামের সকল ব্যবসায়ী সমাজ’ ও ‘বঞ্চিত ব্যবসায়ী সমাজ’র ব্যানারে বিভিন্ন সংগঠন চেম্বার পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগ ও পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
চেম্বার সভাপতি চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, সম্মানিত ব্যবসায়ী তথা সদস্যদের দাবির প্রতি সম্মান রেখে এ ঐতিহ্যবাহী চেম্বারের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ করে আগামীতে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতার লক্ষ্যে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সব পরিচালক পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
তিনি চিঠিতে আরও বলেন, জরুরি কার্যাদির মধ্যে চেম্বারের সদস্যপদ গ্রহণ ও নবায়ন কার্যক্রম একটি দৈনন্দিন চলমান প্রক্রিয়া, যা আমদানি–রপ্তানিসহ ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যিক দলিল। চেম্বারের মালিকানাধীন দেশের প্রথম ও একমাত্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার একটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ২৪ তলা ভবন, যেখানে একাধিক ব্যাংক, ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট, শিপিং ও করপোরেট হাউসসহ ২৭টি গুরুত্বপূর্ণ অফিস তাদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চলমান রয়েছে ভবনের নির্মাণ ও নিয়মিত মেইনটেইন্যান্স কাজ।
এ ছাড়া বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জেনারেটর, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ প্ল্যান্ট, চেম্বার কর্মকর্তা–কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মী, আনসার সদস্য ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিতে হয় নিয়মিত বিল বা পেমেন্ট। পদত্যাগের ফলে সভাপতিমণ্ডলী ও বোর্ডের অবর্তমানে চেম্বারের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনায় শূন্যতা তৈরি হবে। এ অবস্থায় যেহেতু সব পরিচালক পদত্যাগ করেছেন সেহেতু চেম্বারের ২০২৩–২৫ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগ অনুমোদনপূর্বক সুষ্ঠু, সুন্দর, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন ও চেম্বারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় যাতে অচলাবস্থা সৃষ্টি না হয় তার জন্য প্রশাসক নিয়োগের জন্য চেম্বারের বিদায়ী সভাপতি ওমর হাজ্জাজ অনুরোধ জানিয়েছেন।