স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, প্রবীণ হলে আমরা বৃদ্ধাশ্রমের কথা চিন্তা করি। চিন্তা করবেন কেন? আমার কথা হলো– প্রথমে আপনি আপনার সম্পত্তিটা কাউকে লিখে দেবেন না। মরার আগে যদিও লিখে দিতেও হয় তাহলে নিজে চলার মতো সম্পত্তি রেখে দেবেন। এটি করলে যতদিন পর্যন্ত সম্পত্তি আপনার কাছে থাকবে, ততদিন আপনার ছেলে কিংবা তার বউ আপনার তোষামোদ করবে। গতকাল বিকেলে নগরীর প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত ‘প্রবীণ বান্ধব সমাজ গঠনে করণীয়’শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দি সিনিয়র সিটিজেন্স সোসাইটি চট্টগ্রাম সভাটির আয়োজন করে।
প্রবীণদের উদ্দেশে আজাদী সম্পাদক বলেন, আপনারা কখনো রিটায়ার করবেন না। সব সময় অ্যাক্টিভ থাকবেন। এটা হলো বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় মূলমন্ত্র। আপনারা দেখবেন যারা সরকারি চাকরি থেকে ৬০ বছরে রিটায়ার করেন, দেখা যায় পরবর্তীতে তাদের মধ্যে হতাশা চলে আসে। অনেক সময় তারা মনে করেন, আমি তো সব দিয়ে ফেলেছি, এখন তো কিছুই দেয়ার নেই। এখানে কিন্তু একজন মানুষের পরাজয়। কিন্তু আপনি একজন ব্যবসায়ীকে দেখেন তাদের মধ্যে এই চিন্তা আসে না। এখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর। তাহলে আপনি ৭৩ বছর বাঁচবেন না কেন? ৬৫ বছরে কেন মারা যাবেন? আমি এখন ৮০ বছর বয়সেও হাঁটি। কারণ আমি সব সময় কাজের মধ্যে লেগে থাকার চেষ্টা করি। আমি দেখেছি, আমার অনেক আত্মীয়–স্বজন আছেন, যারা ৬০ বছরে বুড়ো হয়ে গেছে। আরেকটা কথা হচ্ছে, আপনারা কখনো মরার আগে মরবেন না। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘কাউয়ার্ডস ডাই মেনি টাইম বিফোর দ্যায়ার ডেথ’। আমরা সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করবো। আমরা আরেকজন প্রবীণের কথা চিন্তা করছি, সেটাও একটা ভালো কাজ। আজকে বক্তব্যের মধ্যে সুন্দর সুন্দর যে প্রস্তাবনাগুলো এসেছে সেগুলো আমরা নিশ্চয় দেখবো। তবে আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এরপরও আমরা করবো। সরকার সব সময় চেষ্টা করে, কিন্তু সরকারের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব হয় না। আমাদের নিজেদেরও উদ্যোগী হয়ে অনেক কিছু করতে হবে।
সভায় প্রবীণদের বেশ কিছু সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে–আগামী জাতীয় বাজেটে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন খাত প্রবর্তন করা। প্রাথমিক পর্যায়ে ৭০ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সের নাগরিকদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু করা। প্রবীণ কল্যাণ তহবিল গঠন করে তাতে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা ফান্ডের অর্থ জমাদানের সরকারি নির্দেশনা এবং ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে দেয়া অর্থ করমুক্ত রাখাসহ ইত্যাদি।
সিনিয়র সিটিজেন্স সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি লায়ন এম. শামশুল হক ও সেক্রেটারি ফর এডভোকেসি এন্ড পাবলিকেশন্স সিরাজুল করিম মানিকের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সোসাইটির প্রথম সহসভাপতি ড. মাহমুদুল হক চৌধুরী, ডা. কিউএম অহিদুল আলম, সাংবাদিক মো. ইসকান্দর আলী চৌধুরী, সিরাজুল হক আনসারী, আবুল কালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ, ডা. দুলাল দাশ, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সাংবাদিক মঈনউদ্দিন কাদেরী শওকত, জিয়াউদ্দিন আহমদ, রেহানা বেগম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার এএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী, অধ্যাপক দিলীপ কান্তি দাশ, আলহাজ্ব এমদাদ হোসেন, লায়ন মো. নুরুল আলম, গোলাম মহিউদ্দিন বাবুল, লায়ন পি আর সিংহ প্রমুখ।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি লায়ন শামশুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোসাইটি বয়স্ক প্রবীণ ব্যক্তিদের মাঝে চাল, ডাল, তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেন। এসময় জরুরি টেলিমেডিসিন সেবা চালু করে সরাসরি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবাও প্রদান করা হয়। প্রবীণরা করুণা চান না, চান প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার।