সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে

| শনিবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

টানা দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে ড্রপআউট হওয়ার প্রবণতা। অভাব-অনটন, অসচেতনতা ইত্যাদির কারণে অনেক বাবা মা-ই তার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। ফলে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে বাল্যবিয়ে। আর ছেলেদের বড় একটি অংশ দরিদ্রতার কারণে উপার্জনমূলক নানা কাজে অংশ নিচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে উপার্জনে। কেউবা তাদের পিতামাতাকে পারিবারিক নানা কাজে সহায়তা করছে।
গত ১১ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘ঝরেই গেল প্রাথমিকের সাড়ে ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী, অনুপস্থিত অর্ধ লাখের বেশি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম জেলার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে সাড়ে ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। করোনা সংক্রমণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম চালু হয়েছে। শ্রেণি কার্যক্রম চালু পরবর্তী এক মাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বছরের শেষে আমরা ‘ড্রপ আউট’ (ঝরে পড়া) সংক্রান্ত তালিকা প্রস্তুত করে থাকি। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশেষভাবে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী- জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬০০ জন। এর মাঝে অর্ধ লাখের বেশি (৫৬ হাজার ৩১৩ জন) শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে শ্রেণি কার্যক্রমে অনুপস্থিত’।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটা ঠিক যে কিছু কিছু শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। কেউ কেউ শিশুশ্রমে জড়িয়েছে। কিন্তু ঝরে পড়ার বিষয়টি বোঝার জন্য আরও গভীরে যেতে হবে। জানতে হবে প্রকৃত কারণ কী। কেননা করোনায় অনেক অভিভাবক এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলে গেছেন। অনেকে ফিরলেও আস্থার অভাব আছে। সে জন্য হয়তো এখনো সন্তানকে স্কুলে পাঠাননি। তাই এখন সবার আগে যে কাজটা করতে হবে, সেটি হলো সব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনার প্রচেষ্টা।
অস্বীকার করা যাবে না যে, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলেমেয়ের অন্তর্ভুক্তির বৃদ্ধি এবং সমতা সৃষ্টির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। সফলতার দিকগুলো হল, সব শিশুর প্রাথমিকে ভর্তি হওয়া, শ্রেণিকক্ষে লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠা এবং অতি উচ্চহারে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শেষ করা। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিশুদের জন্য ঝরে পড়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এই স্তরে শিক্ষার মান নিয়েও কথা ওঠে। অনেকে বলেন, নিম্নমানের কারণে শিশুরা উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় এবং এক পর্যায়ে ঝরে পড়ে। যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অপুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এসবই শিক্ষা গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক বিদ্যালয়ে ধারণক্ষমতার চেয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ বিদ্যালয় দিনে দুই শিফট চালায়। শিক্ষকদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান, তাদের ওপর নজর রাখা এবং জবাবদিহির ঘাটতি বিদ্যালয়ের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
নানা সংকটে প্রাথমিক শিক্ষাকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা কঠিন হয়ে উঠেছে। কেবল পরীক্ষানির্ভর প্রাথমিক শিক্ষা উদ্বেগের একটা কারণ। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। নেই কোনো কার্যকর মনিটরিং। তার ওপর রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের মনিটরিংয়ের নামে দুর্নীতি ও শিক্ষক হয়রানি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদেরও চেষ্টা করতে হবে। সবাই মিলেই সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। সংকট নিরসনে শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে। শিক্ষার অর্জনগুলো ধরে রাখতে হবে। শিক্ষার জন্য দরকার একটা প্রণোদনা প্যাকেজ। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের জন্য বিকল্প পাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার যে কারণগুলো ছিলো বা আছে, মহামারিতে সেগুলোর ঝুঁকি আরো বেড়েছে। এটা পুনরুদ্ধার করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবু সেই কাজ আমাদের করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে