সব বোঝা আর দুর্ভোগ এসে পড়ে জনগণের ঘাড়ে

| বৃহস্পতিবার , ১১ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে দেশে এখন সবকটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। অবাক করার বিষয়, তেলের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। আর বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, তেল হচ্ছে বাস ভাড়ার একটি অংশ মাত্র। বাসে মালিকের বিনিয়োগ, ড্রাইভার হেলপারের বেতন, অফিস খরচসহ আনুষাঙ্গিক বহুকিছুর ওপর ভাড়া নির্ভর করে। শুধু জ্বালানি তেলের ওপর ভাড়া নির্ভর করে না। অথচ ভাড়ার আংশিক উপলক্ষের ওপর ভর করে সরকার বাসভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি একেবারে ঠিক হয়নি। এতে জনজীবনে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। তাই দেশেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হবে। কিন্তু এক ধাপে ২৩ শতাংশ মূল্য বাড়িয়ে সরকার জনগণের ক্ষতি করেছে। এতে সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টে পড়ে যাবে। প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। বাড়বে মূল্যস্ফীতি। কৃষিসহ নানা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাজারে ইতোমধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর জের ধরে সামাজিক নানা অস্থিরতা তৈরি হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্য-তেলের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ ক্ষুব্ধ। এ অবস্থায় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার এবং অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল এবং চিনির শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। অন্যদিকে, বাজারে নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির দায় নিতে নারাজ খুচরা বিক্রেতারা। তারা বলছেন, আড়তদারেরা পণ্য মজুদ করছে বলেই দাম বাড়ছে। এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এসব পণ্যের মূল্যও আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের মনে রাখা দরকার যে, দেশে করোনাকালে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। এমন একটি জটিল পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জনজীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনমানের ধারাকে অবনমন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
তাঁরা বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বহুমাত্রিক। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যেমন বাড়ে তেমনি সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপরও এর প্রভাব পড়ে। এমনকি ব্যয় বাড়ে কৃষিপণ্য উৎপাদনেও। কারণ, ডিজেলের ব্যবহার সেখানে অপরিহার্য। ফলে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির এই প্রভাব কৃষিকাজেও পড়বে। কিছুদিন পরেই সেচের প্রয়োজন হবে জমিতে। দেশে ধান উৎপাদনে মোট সেচের ৯৩ ভাগ সেচই প্রয়োজন বোরো মৌসুমে। এই সেচের জন্য ব্যবহৃত সেচযন্ত্রের অধিকাংশ ডিজেল চালিত। ফলে এবার বোরো চাষের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাবে অনেক। ফলে বাড়বে চালের দাম।
দ্রব্যমূল্যের এই অযৌক্তিক বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে বাজার সিন্ডিকেট বা চক্র। তারা যোগসাজশের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো তারা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। নানা অজুহাত তুলেও বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। এসব ক্ষেত্রে বেশি দামে পণ্য ক্রয় ছাড়া ভোক্তাদের আর কিছু করার থাকে না। এভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা এক ধরনের অপরাধ নিশ্চয়ই। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে এমন ঘটনা বিরল। ফলে বাজারে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এ প্রবণতা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব সরকারের। ব্যবসায়ীরা কায়েমী স্বার্থে ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে, আর সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এটা চলতে পারে না।
সব বোঝা আর দুর্ভোগ এসে পড়ে জনগণের ঘাড়ে। বহু দেশে করোনাকালে মানুষের আয় সমর্থনসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। সরকারের আওতায় থাকা জিনিসপত্রের দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সরকার এসব সাধারণ মানুষের কাজে আসে এমন কর্মসূচি গ্রহণের পরিবর্তে তাদের ভোগান্তি হয়, এমন কাজই যেন করছেন-এমন অভিযোগ ভোক্তাদের। তাই সরকারের উচিত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে