দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদের কেন পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য নীতিমালা করার নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করে। নিজের ছয় মাস বয়সী ছেলে নুবাইদ বিন সাদীর সঙ্গে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান গত ৩ জুলাই এ রিট দায়ের করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তৌফিক সাজওয়ার পার্থ। খবর বিডিনিউজের।
আইনজীবী ইশরাত হাসান পরে সাংবাদিকদের বলেন, সিজারের মাধ্যমে আমার বাচ্চার জন্ম হয়। তখন আমার এবং বাচ্চার দুজনেরই কেয়ার ও অ্যাটেনশন প্রয়োজন ছিল। সিজারিয়ান হোক আর নরমাল ডেলিভারি হোক, মায়ের কেয়ারের জন্য কিন্তু মানুষ পাওয়া যায় না। একজন মায়ের নবজাতক থাকলে এবং সঙ্গে আরও একটি বাচ্চার কেয়ার করা, সেটি একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর ৭৮টির মতো দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটি আছে। আমরা রিটে পিতৃত্বকালীন ছুটি চেয়েছি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে রুল জারি করেছেন। পিতৃত্বকালীন ছুটি না থাকা কেন অবৈধ ঘাষণা করা হবে না এবং সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কেন পিতৃত্বকালীন ছুটি ঘোষণার নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মোট ১১ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে বলে ইশরাত হাসান জানিয়েছেন।
আবেদনে বলা হয়, নবজাতকের যত্নে কেবল মায়ের ভূমিকা মুখ্য, এই ধারনার পরিবর্তন হয়েছে। বাবার ভূমিকাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নেওয়ার সুযোগ সীমিত। এছাড়া সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশু জন্মের হার এদেশে অনেক বেশি। সিজারের পর সুস্থ হতে মায়ের সময় লাগে। এই সময়ে নবজাতক ও মায়ের নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। ফলে পিতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ না থাকায় যারা নতুন বাবা হন, তাদের স্ত্রী ও নবজাতকের দেখাশোনা করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়।
প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের ৭৮টির বেশি দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটির উদাহরণ দিয়ে ইশরাত হাসান বলেন, পিতৃত্বকালীন ছুটির নীতিমালা না থাকা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশে সরকারি কর্মজীবী নারীরা ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস পাচ্ছেন। আগে তারা ছুটি পেতেন চার মাস। বাংলাদেশে একজন নারী তার চাকরি জীবনে দুইবার মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতে পারেন। তবে পিতৃত্বকালীন ছুটির কোনো সরকারি বিধান নেই। গত বছর সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের জন্য ১৫ দিন পিতৃত্বকালীন ছুটি ঘোষণা করে।
প্রতিবেশী পাকিস্তানে একজন চাকরিজীবী নারী তিনবার মাতৃত্বকালীন বা প্রসূতিকালীন ছুটি পান। তবে প্রথমবার ছয় মাস, দ্বিতীয়বার চার মাস এবং তৃতীয়বার তিন মাস ছুটি পেয়ে থাকেন। অপরদিকে দেশটিতে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে এক মাস। তিনবার এই ছুটির সুযোগ পান পুরুষরা। ভারতে চাকরিজীবী নারীরা মাতৃত্বকালীন ছয় মাস ছুটি পান। চাকরিজীবনে দুইবার তারা এ ছুটি নিতে পারেন। আর ভারতের সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসেস (লিভ) রুলস–১৯৭২ অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবী পুরুষরা শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে বা জন্মের ছয় মাসের মধ্যে ১৫ দিনের ছুটি পেয়ে থাকেন। চাকরিজীবনে দুইবার তারা এ ছুটি পাবেন। তবে ভারতের রাজ্যভেদে পিতৃত্বকালীন ছুটিরও ভিন্নতা আছে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই নিয়ম মানতে বাধ্য নয়।
ভুটানের রয়্যাল সিভিল সার্ভিস কমিশন অনুযায়ী, দেশটিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন মাস থেকে ২০১৬ সালে ছয় মাস করা হয়েছে। আর পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে ১০ দিন।