সব দোষ ইসিকে দিলে মানব না : নতুন সিইসি

| রবিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব দায় নির্বাচন কমিশনের নয় মন্তব্য করে সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সব দলের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করতে তিনি কাজ করবেন। নিয়োগের প্রজ্ঞাপনের পর সাংবাদিকরা হাবিবুল আউয়ালের ইস্কাটনের বাসায় যান। সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা না পান তবে তাকে নিয়েও ‘ইমেজ সংকট’ হতে পারে। অতীতের দুটি নির্বাচন কমিশনের ইমেজ সংকট আছে, সেটা কাটাতে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইমেজ সংকট আমাকে নিয়েও হতে পারে। আমি যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বের দলগুলোর সহযোগিতা না পাই, নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূল না হলে আপনারা আমাকে দায়ী করবেন। আমাদের চেয়ে অনেক বড় হচ্ছে রাজনৈতিক দায়িত্ব। তারা যদি মনে করে নির্বাচন কমিশন সুন্দর নির্বাচন করিয়ে দেবে, তাহলে ভুল-ভ্রমাত্মক ধারণা হবে। তাদেরকে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তারা আমার কাছে সহযোগিতা চায়, আমিও সহযোগিতা চাই। খবর বিডিনিউজের।
নিউজিল্যান্ড হলে ‘চা খেতে খেতে নির্বাচন হয়ে যাবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতে সেটা হবে না। এখনও পরিবেশ স্ট্যাবল হয়ে উঠেনি। তিনি বলেন, জোরের সাথে বলব, সব দোষ নির্বাচন কমিশনকে দিলে আমি গ্রহণ করব না। রাজনৈতিক দলগুলোর রোল আছে, পুলিশ, আনসার, র‌্যাবকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি ওদের কমান্ড করব না। আমি এসপিকে বদলি করতে পারব না। আমি কমান্ড করলে কেউ রাইফেল নিয়ে দৌড়াবে না। আমার সবার প্রতি সমান দৃষ্টি থাকবে। সকলের সাথে সমআচরণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্যে কারচুপি চিরকালই হয়েছে কম-বেশি। এই জিনিসটা যাতে কম হয়, মানুষের যাতে স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে সেটা যদি আপেক্ষিকভাবে, ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে সফলতা। কিন্তু অ্যাবসোলিউট সেন্সে আমি এখনও বিশ্বাস করি না সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে আসবেন বা আসতে পারবেন। অতীতে ১০০-২০০ বছরে নির্বাচনে সেটা দেখা যায়নি। কিন্তু নির্বাচনে যখন সকলে আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে, কিছু এদিক-সেদিক হতে পারে। অনেকে বলেন, সরকারি দল চাপ প্রয়োগ করেন। এটা ঠিক নয়। যারা সরকারি দলে থাকেন তাদের কিছু বাড়তি সুবিধা থাকে। যদি জাতীয় পার্টি থাকত, বিএনপি থাকত। এটাকে অব নেগেটিভলি নিলে হবে না।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে তাদের বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে নতুন সিইসি বলেন, বিএনপির বক্তব্য শুনে একটু হতাশ হচ্ছি, উনারা নির্বাচন করবেন না। কিন্তু আমি বলব, নির্বাচনে আসেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আপনি যদি মাঠ ছেড়ে দেন, তাহলে নির্বাচন অবাধই হবে। কোনো বাধা থাকবে না। মাঠে যদি থাকেন, তাহলে নির্বাচন বাধা-বিপত্তির মধ্যে সকলের অংশগ্রহণটা হবে। অবাধ হলো, কেউ গেল না আমি একাই ভোট দিয়ে আসলাম। সে অবাধ আমরা চাচ্ছি না।
‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ইসিকে তৈরি করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাও আমি বলব অ্যাবসলিউট সেন্সে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে…এজন্য পক্ষ-প্রতিপক্ষ শক্তিকে কাছাকাছি শক্তির হতে হয়। যারা অপজিশনে থাকবেন তাদের আরও সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাহলে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ আপেক্ষিকভাবে ভালো হবে। নির্বাচন কমিশন একা সব কাজ করতে পারবে না বলেও জানান আউয়াল। আমি সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে বসব। তারপর দায়িত্ব নিয়ে আরও বেশি ঋদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি সবাই সহযোগিতা করবে। সবার বক্তব্য শুনে আন্তরিক মনে হয়েছে। সবাই সুন্দর নির্বাচন চাইছে। নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন করে না। অনেক স্টেকহোল্ডার থাকে। নির্বাচন কমিশন টপ লেবেলে থেকে পলিসিগুলো বলে দেয়। সব সেন্টারে নির্বাচন কমিশন থাকে না। প্রশাসনকে কতটা নিরপেক্ষ করা যায়, দায়িত্বশীল করা যায়, সেটাও কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ।
ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনে কিছু বিষয় কষ্ট দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেমন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী পার্টি যেটা বলে, ওরা ওরা মারামারি করছে। এগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের এগুলো দেখতে হবে।
আগের দুই কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, সেই জায়গায় ইমেজ কতটুকু রাখতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা দিন শেষে বলতে পারব। কতটা দায়িত্ব পালন করতে পারব তার ওপর নির্ভর করবে। অতীতে কোন কমিশন কী করেছে সেটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আমি মনে করি সেটা নিয়ে বলার বিষয়ে আমি যোগ্য নই।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে নতুন ইসির কাজ কী হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এখনই বলতে পারব না। তবে এটা সহজ কাজ নয়। সমন্বিতভাবে সকলে মিলে কাজ করব। আমার কাছে লাঠি নেই, বন্দুক নেই। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মতো যুদ্ধ করতে পারব না। খালি হাতে যুদ্ধ করতে হবে। আমাদের অস্ত্র আপিল। সকলে যদি দায়িত্ববোধের সঙ্গে কাজ করে তাহলে সুশাসনের দিকে অগ্রসর হবে। নির্বাচন নিয়েই মাথা ঘামাব। রাজনৈতিক দিকে নয়। কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইলে রাজনৈতিকভাবে যেতে যাবে। নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়।
আস্থার পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের মুখ্য ভূমিকা আছে, সেখানে ভূমিকা কী থাকবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি মনে করি না সব আমার দায়িত্ব। এখানে অন্যদের ভূমিকা আছে। গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। আমি যদি ভুল করি সমালোচনা করবেন। ধরিয়ে দেবেন। চ্যালেঞ্জ বলে পিছিয়ে যাব না। মোকাবেলা করতে হবে। সেটা করব। আমি সবাইকে বলব, নির্বাচনে আসুন। মাঠ ছেড়ে যাবেন না। রাজনৈতিক দল মানেই নির্বাচন করবে। তাদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। যারা বলছেন নির্বাচন করবেন না। তাদের প্রতি অবশ্যই আহ্বান থাকবে, আসেন, নির্বাচন করেন। না হলে ডেমোক্রেসি শক্তিশালী হবে না।
দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। কীভাবে কাজ করব। আগে শপথ নিতে দিন। তারপর কীভাবে কাজ করব ঠিক করব। আমাদের আসল কাজ নির্বাচন পরিচালনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প হিমাগারে
পরবর্তী নিবন্ধকলেজ না পাওয়াদের আবেদনের সুযোগ শেষ হচ্ছে আজ