অবশেষে পুরোদমে চালু হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন। প্রকল্প উদ্বোধনের পর পাঠানো জ্বালানি তেলের হিসেবে গরমিল, ট্যাংক কেলিব্রেশনের গোলমাল, মজুদে জালিয়াতিসহ বিভিন্ন কারণে জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। দুইমাস পর সব ত্রুটি সারিয়ে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল কোম্পানি এই পাইপলাইনে নিজেদের চাহিদানুযায়ী জ্বালানি তেল সরবরাহ দিয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দেশের জ্বালানি তেল সেক্টরে গতিশীলতা, জ্বালানি নিরাপত্তা, সিস্টেম লসের নামে তেল চুরি বন্ধসহ বিভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে নেওয়া এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৯কোটি টাকা। গত ২২ জুন পরীক্ষামূলকভাবে এই পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু হয়। এরপর ১৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু তেল সরবরাহ করার পরই বড় ধরনের গোঁজামিল ধরা পড়তে শুরু করে। ১৯ সেপ্টেম্বর পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড পাঠায় ৩৯ লাখ ৯০ হাজার ৯০৭ লিটার তেল। এর আগে ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর মেঘনা পেট্রোলিয়াম পাঠায় ৭০ লাখ লিটার এবং ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর আরও ৭৫ লাখ লিটার। যমুনা অয়েল কোম্পানি ১৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঠায় ১ কোটি ৮ লাখ লিটার ডিজেল। কিন্তু এসব তেল চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইলে পাঠানোর পর হিসাবে ব্যাপক গরমিল ধরা পড়ে।
নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোয় পৌঁছানোর পর পদ্মা ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের অন্তত ৫০ হাজার লিটার তেল কম পাওয়া গেছে। তবে সবচেয়ে বড় ঘাটতি ধরা পড়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির ক্ষেত্রে। ফতুল্লা ডিপোয় দুই দফায় মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার লিটার ডিজেল কম পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার পর গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে পাইপলাইনে তেল সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হয়। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করে সারানো হয়েছে। কেলিব্রেশন ঠিকঠাক করা হয়েছে। কয়েকটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
অবশেষে নতুন করে পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি কোম্পানিই নিজেদের চাহিদামতো তেল চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল হয়ে ঢাকা অঞ্চলে নিয়ে গেছে।
সূত্র বলেছে, দেশে বর্তমানে বছরে গড়ে প্রায় ৭০ লাখ টন তেলের চাহিদা। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সরবরাহ ছিল ৬৮ লাখ টন, যার ৬৩ শতাংশ ডিজেল। পাইপলাইন চালু থাকলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বছরে অন্তত ৩০ লাখ টন ডিজেল সরবরাহ করা যাবে।
বিপিসি সূত্র জানায়, দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির অন্তত ৪০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় ঢাকাসহ সন্নিহিত অঞ্চলে। পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের ডিপো, সেখান থেকে সড়কপথে এসব তেল ঢাকা অঞ্চলে পৌঁছায়। প্রায় ১৫০টি ছোট–বড় অয়েল ট্যাংকারের পাশাপাশি রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে এসব তেল পাঠানো হয়। ঢাকা অঞ্চলের তেল পরিবহনে বছরে বিপিসির খরচ হয় অন্তত ২০০ কোটি টাকা। পাইপলাইন পুরোদমে চালু হলে এ ব্যয় সাশ্রয় হবে বলেও বিপিসির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়।











