খাগড়াছড়ির বন এখন সবুজে মোড়ানো। সেগুন, রাবার বা ফলের বাগান অর্থাৎ মনোকালচারের আধিক্যের কারণে কমেছে পাখিদের আবাসভূমি। পাখিদের পছন্দের জায়গা হলো ঘন ঝোপালো জঙ্গল। ছোট টিলার পাদদেশে বা সমতল ভূমির লাগায়ো জঙ্গলে পাখিদের বিচরণ বেশি দেখা যায়। তেমন এক পাহাড়ি জঙ্গলে কালো ঘাড় রাজন পাখি ক্যামেরা লেন্সে ধরা পরল। রাস্তার উপর জমা পানি খেতে বারবার জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসছে রাজকীয় পাখিটি। চঞ্চল পাখিটি ফ্্েরমবন্দি সহজ নয়! পাহাড়ে ঘন জঙ্গলে এই পাখি মুগ্ধতা ছড়ায়।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলা সদরের এক সবুজ বনে পাখিটি দেখা যায়। রাজনের ইংরেজি নাম ব্ল্যাক নেপড মর্নাক। মর্নাক অর্থ রাজন বা রাজ্য, মহারাজা। পাখিটির মাথার উপরে কালো টুপি বা মুকুটের মতো রয়েছে। মুকুটের কারণেই এটির রাজন নাম পেয়েছে।
দারুণ চঞ্চল পাখিটি কখনো জোড়ায় বা কখনো একা একা চলে। সারাদিন বন বা ঝোপে জঙ্গলে উড়ে বেড়ায়। উড়ে এসে পানিতে ছোঁ মেরে আবার ঝোপে চলে যায়। রাজনের শরীরজুড়ে নীলের আধিক্য বেশি। মাথায় কালো টোপর রয়েছে। পাও নীলচে। লেজতল সাদা। চুঞ্চু নীলচে সরু। লম্বায় অনেকটা চড়ুই পাখির মতই। এদের চোখ কালো। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঠোঁটের উপরে কালো লোমশ রয়েছে। রাজনের লম্বায় ১৬ সেন্টিমিটার। এদের ওজন মাত্র ১২ গ্রাম।
রাজন আমাদের দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মিয়ানমার ও ইন্দোচীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এদের প্রজনন মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত। একসঙ্গে ৩-৪টি ডিম দেয়। পুরুষ ও মেয়ে পাখি মিলেমিশে ডিমে তা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। এদের প্রধান খাবার কীটপতঙ্গ। আইইউসিএন এর মতে কালো ঘাড় রাজন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন, পাহাড়ে ঘন ঝোপালে জঙ্গলে রাজন পাখি দেখা যায়। এরা বনের লাগায়ো সমতল ভূমিতেও বিচরণ করে। তবে খুব চঞ্চল পাখিটি এক জায়গা স্থির থাকে না। সারাদিন তার বিচরণ চলতে থাকে। তবে কালো ঘাড় রাজনসহ পাখি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন সংরক্ষণ ও পরিবেশ বান্ধব গাছ লাগানোর দাবি করেছেন তিনি।