ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের চেন্নাই। চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত। চট্টগ্রাম তো বটেই সারা বাংলাদেশের মানুষ কিছু হলেই এক দৌড়ে চলে আসে এই চেন্নাইতে। তাই তো চেন্নাই আসলেই পথে–ঘাটে অহরহ দেখা মেলে স্বদেশিদের। গতকাল বুধবার ঢাকা থেকে চেন্নাই আসার পথে বিমানে যত যাত্রী ছিল তার প্রায় সবাই চিকিৎসার জন্য চেন্নাই আসছিল। আমরা হাতে গোনা তিন–চার জন ছিলাম যারা বিশ্বকাপে আসছি। এই চেন্নাইকে শুধু চিকিৎসার শহর নয়, এটিকে দক্ষিণ ভারতের প্রবেশদ্বারও বলা হয়ে থাকে। এবার প্রসিদ্ধ এই শহরে বাংলাদেশ নামবে বিশ্বকাপে তাদের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে। ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের চেন্নাই শহরটির একপাশে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। আর সে বঙ্গোপসাগরের পাশেই মুথিয়া আন্নামালাই চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম বা এম এ চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম। ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এই স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯১৬ সালে। এই স্টেডিয়ামটির আগে ভারতে প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট স্টেডিয়ামটির নাম কলকাতার ইডেন গার্ডেন। বিশ্বকাপ উপলক্ষে দারুণ সেজেছে এই চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম। অবশ্য এরই মধ্যে একটি হাই ভোল্টেজ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে এই ভেন্যুতে। যেখানে স্বাগতিক ভারতের কাছে পাত্তা পায়নি পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
দারুণ সুন্দর এম এ চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম। প্রায় ৫০ হাজার দর্শক বসতে পারে এই স্টেডিয়ামে। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার পাশাপাশি স্টেডিয়ামের মাঠটি যেন একেবারে সবুজ গালিচা। স্টেডিয়ামের উপর তলার গ্যালারির ছাদ করা হয়েছে অনেকটা তাঁবুর স্টাইলে। দেখতে দারুণ লাগে। আর সে মাঠেই আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশ দল খেলবে এবারের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত শুরু করা নিউজিলান্ডের বিপক্ষে। আগের দিন হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের কাছে লজ্জার হারের পর গতকালই চেন্নাইতে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল। তবে তারা মাঠে আসেনি অনুশীলনের জন্য। নিউজিল্যান্ড দল আগেরদিন চেন্নাইতে আসায় তারা গতকাল সন্ধ্যায় অনুশীলন করেছে স্টেডিয়ামে। প্রথমে মাঠে ফিল্ডিং আর ক্যাচিং প্র্যাকটিসের পর মূল স্টেডিয়ামের বাইরে সারি সারি ভাবে নির্মিত নেটে করেছে ব্যাটিং অনুশীলন। বাংলাদশে দল আজ সন্ধ্যায় অনুশীলন করবে এই স্টেডিয়ামে।
ঢাকা থেকে চেন্নাই আসার পথে বিমানে সবাই চিকিৎসা প্রার্থী। তাই তো ইমিগ্রেশনে অফিসার আমাকেও জিঙ্গেস করলেন কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যাচ্ছি আমি। তাকে বললাম আমি বিশ্বকাপ কাভার করতে এসেছি। শুনে তিনি যেন একটু অবাকই হলেন। কারণ এখানে তো সবাই চিকিৎসা করাতে আসে। হরেক রকমের হাসপাতাল রয়েছে এই চেন্নাইতে। যেখানে প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। তবে বিমান বন্দর থেকে চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামের একেবারেই পাশে চিপাক এলাকায় হোটেলে আসা পর্যন্ত নানা ঐতিহ্য চোখে পড়ছিল। চারদিকে সবুজে ভরা এবং সাজানো গোছানো এক শহর এই চেন্নাই। প্রসিদ্ধ মেরিনা বিচের একেবারে কাছেই চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম। যেখানে আগামীকাল বাংলাদেশ দল মাঠে নামবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
গতকাল বিকেলে যখন স্টেডিয়ামে যাই তখন দেখা গেল স্টেডিয়ামের মাঠ কর্মীরা দারুন ব্যস্ত মাঠটিকে সুন্দরভাবে প্রস্তুত করার জন্য। দারুন সবুজ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামের মাঠের ঘাস। উইকেটও প্রস্তুত। তবে বিশ্বকাপ হলেও নিরাপত্তা কর্মীদের নেই তেমন কড়াকড়ি আর বাড়াবাড়ি। দারুন সহযোগিতা মনোভাব সম্পন্ন এই সব নিরাপত্তা কর্মীরা। বিশেষ করে আমরা যাদের পুলিশ বলি তারা যেন সহায়তার জন্য হাত বাড়িয়েই থাকেন। সুন্দর এই শহরে বাংলাদেশের আরেকটি বিশ্বকাপ ম্যাচ। এখন দেখার অপেক্ষায় সেই ম্যাচটিতে বাংলাদশে কতটা নিজেদের প্রমাণ করতে পারে।
