সবুজে আচ্ছাদিত মাতামুহুরীর দুই তীরসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি

চকরিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ

শীতকালীন রকমারী সবজিতে ভরে উঠেছে চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর দুই তীরসহ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিস্তীর্ণ জমি। সদ্যবিদায়ী বছরের শেষ মাসের শুরুতে মাঠে নামা প্রান্তিক কৃষকেরা এই শীতকালীন আগাম সবজি চাষে নেমে পড়েন। এতে সুফলও মিলেছে তাদের ঝুঁড়িতে। আগাম সবজির আবাদ করে তা বিক্রির মাধ্যমে আর্থিকভাবে বেশ লাভবানও হচ্ছেন কৃষক পরিবারগুলো। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির সেই সুযোগে আবাদ করা আগাম শীতকালীন সবজির বেশ দামও পেতে শুরু করেছেন কৃষক। এতে তাদের মাঝে হাসির ঝিলিক পরিলক্ষিত হয়েছে। এদিকে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়ে বর্তমানে বিরাজ করছে সবুজ সবজির সমারোহ। রকমারী বিভিন্ন সবজি রয়েছে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়ে। যেদিকে চোখ যায় ধু ধু বালুচরকে সবুজে আচ্ছাদিত করে রেখেছে এই সবজি ক্ষেত। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন আগাম সবজির আবাদে নেমে পড়েন লক্ষাধিক প্রান্তিক কৃষক। কৃষি বিভাগ এবার শীতকালীন আগাম সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৩৩৫০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাল শাক, পুই শাক, ধনিয়া পাতা, শিম, বরবটি, ঢেঁড়শ, মিষ্টিকুমড়া, তিঁত করলাসহ রকমারী সবজি আবাদের সেই লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হওয়ার পথে। সেই হিসেবে এবার প্রান্তিক কৃষকেরা তাদের জমিতে সবজি ফলিয়ে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছে।

কৃষি বিভাগ আরো জানান, শীতকালীন সবজির পাশাপাশি রবি শস্যেরও আবাদ করা হয়েছে। তম্মধ্যে আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবিশষ্যের আবাদে নেমে পড়েন প্রান্তিক কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ ২৬৩৬ হেক্টরে এই রবিশষ্যের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। সরজমিনে দেখা গেছে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের ক্ষেত থেকে শীতকালীন সবজি তুলে বাজারে বিক্রি ও দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহও করে যাচ্ছেন। এতে এখানকার লক্ষাধিক প্রান্তিক কৃষক পরিবার শীতকালীন রকমারি সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে বেশ স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব দে দৈনিক আজাদীকে জানান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়ে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নামার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। একইসাথে নানা সহায়তা দিয়ে আগেভাগে মাঠে নামানো হয় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের পৌরসভার বিভিন্ন ব্লক ছাড়াও বিএমচর, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, কৈয়ারবিল, কাকারা, সুরাজপুরমানিকপুরসহ অন্তত ১০টি ইউনিয়নের কৃষককে। বেগুন, মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ শীতকালীন আগাম সবজি ঘরে তুলতে প্রান্তিক এসব কৃষক এখন ব্যস্তসময় পার করছেন মাঠে। শীতকালীন সবজি ছাড়াও বছরের বারো মাসজুড়ে এসব কৃষক মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির আশীর্বাদ এবং তীরের উর্বর মাটির ক্ষেতে রেকর্ড পরিমাণ নানান রকমারি ফসল উৎপাদন করে আসছেন। উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীতীরের দ্বীপকূল এলাকার কৃষক মো. ছাবের জানান, প্রতিবছর মাতামুহুরী নদীর তীরের প্রায় ৩ কানি জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করেন তিনি। এবারও এই পরিমাণ জমিতে শীতকালীন আগাম রকমারি সবজির চাষ করেন। কৃষি বিভাগের দেওয়া পরামর্শে প্রায় আগেই মাঠে নেমে পড়েন তিনি। এতে ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে বেগুন, মরিচ, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রিও শুরু করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বন্যা না হওয়ায় আগাম সবজি চাষে নেমে অন্য বছরের চাইতে প্রায় দুই লক্ষ টাকা বেশি আয় হবে এবার, এমনটাই জানালেন তিনি। চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমানপাড়ার কৃষক নাজেম উদ্দিন বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি চাষের জন্য শ্রমজীবী লোক নিয়োগ দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করানো হচ্ছে। চারা রোপণ থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির সঙ্গে সারও প্রয়োগ করা হচ্ছে ক্ষেতে।’ তিনি জানান, শীত শুরু হওয়ার আগে থেকেই পুরোদমে মাতামুহুরী নদীর দুই তীর ভরে ওঠেছে সবুজে। আগে থেকেই সবজি উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরি, বীজবপন, সেচ দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজও শেষ করা হয়। এতে বাজারে রকমারি সবজির সমারোহ হয়েছে। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, আমার ওয়ার্ডের সিংহভাগ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবছর শীতকালীন সবজির আবাদ করেই তাঁরা স্বাবলম্বী হন। তাই আগাম সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় তাঁদের। তাই আগে থেকেই মাঠে নেমে পড়ায় শীতকালীন সবজিও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের চাইতে এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন আমার ওয়ার্ডের কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, অতি বৃষ্টির ধকল না থাকাসহ আবহাওয়া অনুকূলে ছিল বেশ। তাই শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয় শীতকালীন আগাম সবজি চাষে। এতে পৌরসভাসহ মাতামুহুরী তীরের অন্তত ১০টি ইউনিয়নের কৃষকেরা সবজি চাষে মাঠে নামেন। ইতোমধ্যে নদীতীরের কোনো কোনো ক্ষেত থেকে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে তাঁরা লাভবান হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, বরাবরের মতোই মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানি ব্যবহার করে এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন এখানকার কৃষকেরা। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া হয় কৃষকদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রস্তুত বীজতলা, চারা রোপণের অপেক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধহলুদ ফসলের অভাবনীয় সাফল্যে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ