রাঙ্গুনিয়ার কোদালা ধোপাঘাট এলাকা। পাশ দিয়ে বইছে ইছামতি নদী। এক পাশে রয়েছে কোদালা চা বাগান। লাগোয়া পাশের কৃষি জমিতে আবাদ হয়েছে বোরো ধানের। প্রকৃতির এমন সবুজ সমারোহের মাঝে বনের কাঠ পুড়িয়ে, কালো ধোঁয়া উড়িয়ে চলছে খোলা চিমনির ইটভাটা। উপজেলা সদরের নিকটে মেহেরিয়া ব্রিকস্ নামের এই ইটভাটার মালিক স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কাউছার নুর লিটন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রামে প্রশাসনের চলমান অভিযানের মাঝেও রাঙ্গুনিয়াসহ অন্যান্য উপজেলায় চলছে বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগে প্রভাবশালীরা পরিবেশ বিধ্বংসী ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, চট্টগ্রামের সব অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।
জনস্বার্থে গত ১৪ ডিসেম্বর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের দায়ের করা এক রিটের শুনানি শেষে হাই কোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা রুল জারি করে অবৈধভাবে পরিচালিত চট্টগ্রামের সব ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর চট্টগ্রামে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। পরে ইটভাটা বন্ধের ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রাউজানের ২৩টি ইটভাটার ১৮ জন মালিক আপিল বিভাগে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করার আবেদন করেন। চেম্বার জজ বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান লাইসেন্স ছাড়া পরিচালিত সব ইটভাটা বন্ধ করার হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করেননি বলে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
পরে আরো কয়েকটি উপজেলার ইটভাটা মালিকরা আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হলেও কোনো ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দেননি আপিল বিভাগের বিচারপতি। সর্বশেষ ২৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাই কোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এক শুনানি শেষে পরবর্তী ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে চট্টগ্রামের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, কর্ণফুলী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়ায় অভিযান চালাতে গেলেই ‘বড় বড় মানুষের’ ফোন আসে। অনেকে রক্তচক্ষু দেখায়। জানুয়ারিতে এ রকম রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দুই উপজেলায় কয়েকটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেকটা নিরুপায় হয়ে জরিমানা করেন। জরিমানার পর হাই কোর্ট দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করে। এরপর জরিমানা আদায় করা অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্চ আদালত থেকে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অভিযান চলছে ঢিমেতালে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশে সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন থেকে অভিযান চলছে। কোদালায় এই ধরনের দুটি ইটভাটা ছিল। একটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আরেকটি আছে। এটিও ধ্বংসে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোদালা ধোপাঘাট এলাকার মেহেরিয়া ব্রিকফিল্ডে পোড়ানোর জন্য মজুদ করা হয়েছে পাহাড়ি কাঠ। এখানে ইট বানানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ি মাটি।
এ বিষয়ে গত রাতে ইটভাটা মালিক কাউছার নুর লিটন আজাদীকে বলেন, আমি একা এই ইটভাটার মালিক নই। এখানে ১১ জন পার্টনার আছেন। ছোট ইটভাটা। এলাকায় ইট সরবরাহ করে আর কী।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, খোলা চিমনির ইটভাটার ব্যবহার অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। কোদালা এলাকায় খোলা চিমনির ইটভাটার বিষয়ে খবর নিচ্ছি। এটিসহ চট্টগ্রামের অবৈধ সব ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।