চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের পরিবেশবান্ধব নিরাপদ নান্দনিক পর্যটন নগরী হিসেবে সাজাতে চান নবনির্বাচিত মেয়র মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাচিত হওয়ার পর গতকাল সকালে নগরীর বহদ্দারহাটস্থ নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় চট্টগ্রাম নিয়ে তার বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন নবনির্বাচিত এই মেয়র।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এই চট্টগ্রামকে আমি পরিকল্পিতভাবে সাজাতে চাই। এজন্য সবার সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পর্যালোচনা করে যেটা বাস্তবসম্মত হবে সেটাই গ্রহণ করব। তাহলে ভুল কম হবে। ৪১ ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোড় গোড়ায় নিয়ে যাব। মেয়র পদে তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করায় নগরবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। তা বিবেচনায় নিয়ে জননেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এই বিজয় আমার নয়, এই বিজয় চট্টগ্রামবাসীর। এই বিজয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকার। মানুষ আমাকে এত পছন্দ করেছে আমি অভিভূত। মানুষ ভালোবেসেছে, মর্যাদা-সম্মান দিয়েছে। কথা দিতে পারি, সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
একজন নির্বাচিত মেয়র হিসেবে কী কী করতে চান সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করা, কিশোর গ্যাং বন্ধ, মাদক নির্মুল, নগরীর বিভিন্ন অংশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স ও উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ, সন্ত্রাস দমন এবং নগরীতে ব্রিটিশবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান তিনি।
নগরীর সমস্যা সবার সঙ্গে পরামর্শ করে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরবাসীকে কথা দিতে পারি প্রতিশ্রুতি পূরণের কঠোর পরিশ্রম করব। স্পষ্ট বলতে চাই, অন্যায়-অনৈতিক কাজে কখনো ক্ষমতাকে ব্যবহার করব না। সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। কোনো লোভ, অনৈতিকতা আমাকে এক ইঞ্চি বিচ্যুতি ঘটাতে পারবে না। কখনো লোভ-লালসা ছিল না, এখনো নেই। কখনো নীতি বিসর্জন দিইনি। স্বকীয়তা নিয়ে কাজ করে যাব। এছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যা নিরসনে স্থানীয় মহল্লার প্রতিনিধি, সব শ্রেণিপেশার সাধারণ মানুষ এবং কাউন্সিলরদের মতামত ও পরামর্শ নিয়ে বাস্তবায়নযোগ্য সমাধান করা হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবার পরামর্শ নেব। মহল্লা সর্দার থেকে আরম্ভ করে এলাকার গণ্যমান্য লোক-সবার পরামর্শ নেব। আপনার এলাকার কী সমস্যা আছে- সেটা আপনিই চিহ্নিত করতে পারেন। বাইরের কেউ এসে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই এলাকার মানুষই এলাকার সমস্যাগুলো দেখিয়ে দেবে। তারপর এসব সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় তা সবার পরামর্শ নিয়ে সমাধান করব। তখন কেউ আর এককভাবে মেয়রকে দোষারোপ করতে পারবে না। তখন আমি বলবো- আপনাদের সবার সাথেই তো পরামর্শ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন নগরপিতা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সফলতা আসলে সবার জন্যই আসবে। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
জলাবদ্ধতা নিরসন ও চিকিৎসা সেবার সংকট নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়ে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমবে। খালগুলো দখল হয়ে গেছে, উদ্ধার করতে হবে। আমি নিজেও জলাবদ্ধতার শিকার। চেষ্টা করবো আগামী ৫ বছরের মধ্যে জলাবদ্ধা নিরসন করতে। যানজটের সদস্যা আছে সেটাকে নিসরন করবো। সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে চট্টগ্রামের বড় সদস্যা হিসেবে উল্লেখ করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সমন্বয়ের অভাবে সুন্দর রাস্তা করার দুমাসও ঠিক থাকে না। সিটি কর্পোরেশন রাস্তা করলে, দুই মাসের মধ্যে ওয়াসা কেটে ফেলে, টিএন্ডটি কেটে ফেলে, পিডিবি কেটে ফেলে। উন্নয়নের জন্য কাটতে হবে- কিন্তু সরকারি টাকার অপচয় হবে কেন? আগে মেয়ররা উদ্যোগ নিলেও সেবা সংস্থাগুলো যে প্রতিনিধি পাঠায় এতে ফাঁক থেকে যায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব, যেন দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারি। সমন্বয় সভায় সবাই যেন উপস্থিত থাকেন সেই চেষ্টা করব। সমন্বয়ের অভাবে নগরবাসী যেন কষ্ট না পায়। সেই চেষ্টা করব।
নগরীর ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ভোটারের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ মানুষের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, ভোটে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু-সুন্দর ভোট হয়েছে। প্রত্যেকেই কর্মজীবী মানুষ। তারা কর্মে চলে গেছেন। ৮টায় ভোট না দিয়ে ৭টায় অনেকেই কর্মস্থলে চলে গেছে। কর্মজীবী মানুষ ভোটের চেয়ে কাজকে প্রাধান্য দেন। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ১০০% ভোটের মধ্যে ৯০% ভোট পড়েছে। চসিকে আর্থিক সংকটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সৎ-সাহসিকা ও দক্ষা নিয়ে কাজ করব। এতে আর্থিক সংকট কোনো বিষয় না।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্য হন। ১৯৬৯-১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৭০-১৯৭১ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১ নম্বর সেক্টরের বিএলএফ এর মাধ্যমে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ ও কোতোয়ালী থানা এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।