‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ : সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগকেও কাজে লাগাতে হবে

| শুক্রবার , ৭ এপ্রিল, ২০২৩ at ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

আজ ৭ই এপ্রিল ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’। ১৯৪৮ সালের এ দিনেই প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেই থেকে প্রতিবছর নানা প্রতিপাদ্যের আলোকে পালিত হচ্ছে এ দিবসটি। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’।

 

সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত অন্যতম খাত হলো স্বাস্থ্য। বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছরে এ খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্য ছাড়াও অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির বিস্তার, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও

মৃত্যু হার নিম্নমুখী, পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩০এ আনয়ন, মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৮ বছর, অপুষ্টি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ভিটামিন এ ও ফলিক এসিড বিতরণএ সবই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সফলতার চিত্র।

অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান স্বাস্থ্যখাতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেছিলেন, আগে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’। এখন ওই আকাঙ্ক্ষায় নতুন কিছু শব্দ যোগ করতে হয়েছে। এখন আমরা বলছি ‘সবার জন্য সহজলভ্য ও মানসম্মত স্বাস্থ্য’। আগে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ বললে বোঝা যেত দেশের মোটামুটি

সব জায়গায় হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বানালেই হয়ে গেল। এখন কিন্তু আমাদের ‘মানসম্মত ও সহজলভ্য স্বাস্থ্য’ বলতে হচ্ছে। ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ বলতে যে আকাঙ্ক্ষার কথা আমরা বলে এসেছি, তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে দিনবদলের কারণে আকাঙ্ক্ষাটাকেও এখন আমাদের নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। তিনি

বলেছেন, এখন স্বাস্থ্য খরচ অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে গেছে। সরকারি হিসাবের তথ্য বলছে, আমাদের স্বাস্থ্যের পেছনে যত খরচ হয়, তার ৬৭ শতাংশই মানুষ নিজের পকেট থেকে খরচ করছে। অথচ বৈশ্বিক মান হচ্ছে ৩৪ শতাংশের মতো। তার প্রায় দ্বিগুণ আমরা খরচ করছি। আমাদের কাছে স্বাস্থ্য খরচ একটা বড়

বোঝা। স্বাস্থ্যসেবার খরচের বিষয়টি আমরা ঠিকমতো স্বীকার করি না বলে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি কমে যাচ্ছে বা দারিদ্র্য বেড়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যবিমোচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।

আসলে সকলের জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের বিষয়টি অর্থনৈতিক মুক্তি, সুশাসন, পরিবেশ ইত্যাদি অনেক কিছুর সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতিও পেয়েছে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যের উন্নতিতে প্রযুক্তি ব্যবহার

করে বাংলাদেশ পুরস্কৃত হয়েছে। তারপরও সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি সুদূর পরাহতই রয়ে গেছে। ফলে ২০১৬ থেকে ২০৩০ মেয়াদে এসডিজির যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে গুরুত্ব সহকারে সকলের জন্য স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে।

বিধান চন্দ্র পাল তাঁর এক লেখায় বলেছেন, আমাদের দেশে আসলে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা দিতে হলে স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষণার প্রয়োজনীয়তা সবচাইতে বেশি। অথচ এদেশে স্বাস্থ্যসেবার মূল্যায়ন সম্পর্কিত গবেষণা নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্যসেবার সামাজিক দিকটির গবেষণাও একেবারেই অনুপস্থিত।

কিছু কিছু গবেষণা আজকাল হচ্ছে। কিন্তু রোগ, রোগী, তার সামাজিকপারিবারিক অবস্থান, তার জীনগত বৈশিষ্ট্য, নানা কর্ম সম্পাদন ইত্যাদির আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে বিশেষ কোন গবেষণা হয়েছে বলে জানা নেই। অন্যদিকে ডাক্তাররোগীর সম্পর্ক, নার্সডাক্তারের সম্পর্ক, ডাক্তারনার্স ও রোগীর ব্যবহারিক আচরণ

ইত্যাদি নিয়েও বিশেষ গবেষণা আছে বলে আমরা লক্ষ্য করি না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের যে কোন আলোচনাতেই প্রাধান্য পায়কোথায় ডাক্তার নেই, ঔষধ নেই, হাসপাতাল নেই, সিট নেই, হাসপাতালের দুরবস্থা, দুর্নীতি, অনিয়ম, বাজেটে বরাদ্দ কম, দালালদের উপদ্রব ইত্যাদি অনেক বিষয়। এর

প্রতিটি বিষয়ই চিকিৎসাকেন্দ্রিক। এ বিষয়গুলোরও আলোচনা ও সমাধান প্রয়োজন। কিন্তু এ সকল আলোচনার ভিড়ে হারিয়ে যায় প্রতিকার দিকটিআমরা কীভাবে রোগ হ্রাস বা প্রতিরোধ করতে পারি।স্বাস্থ্য সেবাদানের ক্ষেত্রে সরকারি যে ব্যবস্থা আছে সেখানে বিভিন্ন কারণেই সুশাসনের অভাব আছে। সুশাসন

নিশ্চিত করতে হলে যথার্থ মানবিক গুণসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর যেমন প্রয়োজন; তেমনি প্রয়োজন একটি পরিচ্ছন্ন সাংগঠনিক ব্যবস্থা ও দায়বদ্ধ প্রশাসন। এর সাথে যুক্ত আছে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও মেডিক্যাল সাপ্লাই ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং অসুস্থ ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কে সজ্ঞানতা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু সরকারের একার পক্ষে দেশের এত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটা চ্যালেঞ্জিং। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে ব্যক্তি উদ্যোগকে, কমিউনিটি পার্টিসিপেশন, বেসরকারি সহায়তা, বড় কোম্পানি ও এনজিও সাপোর্ট। সবকিছু হওয়ার পরেও সবচেয়ে যা জরুরি, তা হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, প্রতারণা ও অপচয় রোধ এবং মনিটরিং।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে